Home শীর্ষ খবর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যে বিরক্ত কূটনীতিকরাও

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যে বিরক্ত কূটনীতিকরাও

বিশেষ প্রতিনিধি:

নাগাতর বেফাঁস মন্তব্যের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। এমনকি তিনি রাষ্ট্র এবং সরকারের জন্য বিব্রতকর মন্তব্যও করেছেন। যা সরকারের কোন মন্ত্রীতো দূরের কথা, সাধারণ মানুষও বলার কথা না। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’

সাবেক কূটনীতিকরাও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, মন্ত্রীর এমন বক্তব্য দেশের জন্য এবং দলের জন্য মর্যাদাহানিকর। তাই মন্ত্রীর বক্তব্য খতিয়ে দেখার পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির

ভারতকে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার অনুরোধ সংক্রান্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের ১৮ আগস্টের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার(১৯ আগস্ট) বলেছেন, ‘এ বক্তব্য তার(পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ব্যক্তিগত অভিমত। সরকার বা আওয়ামী লীগ ভারতকে এ ধরনের অনুরোধ করেনি।’ একই ধারায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ১৯ আগস্ট বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোন বিদেশি শক্তির শক্তিতে বলীয়ান নয়, আমরা বাংলাদেশের জনগণের শক্তিতে বলীয়ান। সমস্ত বৈদেশিক রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু।’

দুইমন্ত্রীর এই বক্ততেব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বেফাঁস উত্তির বিষয় সরকারের অবস্তান পরিস্কার হয়েছে। একই সাথে অনেকেই মনে করেন, সরকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে বিরক্ত। বিরক্ত জনগণও। কূটনীতিকরাও বিরক্ত ।

প্রথমে ‘বেহেশতে’ থাকা নিয়ে বক্তব্যের জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ আবস্থায় তিনি ‘কথা বলায়’ সতর্ক থাকতে দলের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছেন বলে জানাগেছে। আশাকরা হয়েছিলো, ভবিষ্যতে কথা বলার সময় সাবধান হবেন। কিন্তু বাস্তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সতর্ক হননি।

বরং সতর্কবার্তা পাওয়ার চারদিনের মাধায় নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ড. মোমেন। বলা চলে তিনি, ‘বোমা ফাটিয়েছেন!’ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ

এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, এটা গোপনে বা প্রকাশ্যে কোনোভাবেই বলা উচিত না। এটা কেন উনি বলতে যাবেন। আমাদের সরকারকে কি ভারত টিকিয়ে রাখছে? আমাদের সরকার টিকিয়ে রেখেছে আমাদের দেশের মানুষ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো বলেন, মানুষ যখন চাইবে না, থাকব না; এটাতো উনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নাই, আমার একমাত্র উদ্দেশ্য কীভাবে মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা যায়। তার জন্য বাহিরের কাউকে টিকিয়ে রাখতে বলতে যেতে হবে কেন?

চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এ কূটনীতিক মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, আর এ রকম যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে কেউ এ রকম হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে সেটা বলে নাকি? ওনার মন্তব্য আমাদের রাষ্ট্রের জন্য যেমন মর্যাদাহানীকর তেমনি দলের (আওয়ামী লীগ) জন্যও ক্ষতিকর। এটা উনি কেন বলেছেন, সেটা নিয়ে দেখার বিষয় আছে। এ রকম করে তো বলা উচিত না। এভাবে কথা বলে উনি নিজে তো ছোট হচ্ছেনই, সঙ্গে সঙ্গে দেশসহ সবাইকে ছোট করেছেন। এ রকম বলার কোনো মানে হয় না। এমন মন্তব্যের জন্য ওনাকে দায়িত্ব নিতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, উনি কি কারণে এটা বলেছেন আমি বলতে পারব না। উনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে কথাটা বলেছেন, সেটাও আমি বলতে পারব না। উনি কেন এমন মন্তব্য করছেন এটার ব্যাখ্যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া উচিত। কোন পরিপ্রেক্ষিতে উনি এটা বলেছেন এবং এটার কারণ কি এর ব্যাখ্যা তাকে (মোমেন) দিতে হবে। উনি একবার বলছেন, আমরা ‘বেহেশতে’ আছি। কথা হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা আলাদা প্রেক্ষিত আছে। আপনার মনে চাইল একটা মন্তব্য করে দিলেন, এটা তো ঠিক না।

বিরক্ত খোদ পররাষ্ট্র

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে বিরক্ত খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে বেফাঁস মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে মন্ত্রী শুধু নিজেকে ছোটই করেননি, দেশকেও ছোট করেছেন। আর দেশে সরকার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব দেশের মানুষের, অন্য দেশের হতে যাবে কেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ওনাকে (মোমেন) বারবার বার্তা দেওয়া হয়, যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা না বলেন। কিন্তু এরপরও তিনি (মোমেন) বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেই যাচ্ছেন। বুঝে নাকি না বুঝে বলেন, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। দায়িত্বশীল পদে থেকে উনি কেবল দেশকে নয়, মন্ত্রণালয়কেও ছোট করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রনো ভাই রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেননি

ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক বিশ্বাস ও সম্পৃক্ততার সূত্রে বাম রাজনীতিকদের বিষয়ে বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ লালন করে আসছি। এ ধারায় আশি-একাশি সালে পেশাগত জীবনের সূচনালগ্নে বাম নেতাদের সঙ্গে...

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ, আলোর যাত্রার সূচনায় রাজনীতি

দখিনের সময় ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ (শুক্রবার)। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর...

৬ তারিখে বাজেট দেবো, বাস্তবায়নও করবো : প্রধানমন্ত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ৬ তারিখে বাজেট দেবো। বাজেট আমরা ঠিক মতো দিতে পারবো, বাস্তবায়নও করবো। দেশি-বিদেশি নানা কারণে জিডিপি কিছুটা...

মাদকের নতুন ডিজি মোস্তাফিজুর, বরিশালের কৃতি সন্তান

দখিনের সময় ডেস্ক: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে তিনি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। মোস্তাফিজুর...

Recent Comments