দখিনের সময় ডেস্ক:
নানা অনিয়মের দায়ে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শিক্ষক-কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উপাচার্য শহীদুর রহমানের পরিবারের সদস্য-আত্মীয়দের মধ্যে নয়জনও রয়েছে। শহীদুর রহমান তার স্ত্রীকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই নিয়োগের আবেদনও বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়মের এসব চিত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহমুদুল আলমের সই করা এক চিঠিতে উপাচার্যকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে বাছাই বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুর রহমান। কিছুদিন পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। কমিটি গঠনের এক বছরের বেশি সময় পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
এতে বেরিয়ে আসে, উপাচার্যের মেয়ে ইসরাত খানকে নিয়ম না মেনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ছেলে শফিউর রহমান খান ও শ্যালক জসীম উদ্দীনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছেন। উপাচার্যের চার ভাতিজাও নিয়োগ পান। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপাচার্যের মেয়ে ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রভাষক পদে আবেদন করেন। এ পদে ৩০ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। যাদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ের ফলাফলে পিছিয়ে ছিলেন উপাচার্য-কন্যা। এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের মেয়েকে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তদন্ত কমিটির কাছে উপাচার্য নিজেই অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাই তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় নয়জনের নিয়োগ বাতিল করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সরাসরি অধ্যাপক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের স্ত্রী আবেদন করেছেন, সেটি বাতিলের ব্যবস্থা করতে হবে। ‘বিষয় বিশেষজ্ঞ’ ছাড়া একই ব্যক্তিদের দিয়ে বাছাই বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের ব্যবস্থা নিতে হবে।