Home নির্বাচিত খবর ভারতের যেসব নববধুদের দিতে হয় কুমারীত্বের পরীক্ষা

ভারতের যেসব নববধুদের দিতে হয় কুমারীত্বের পরীক্ষা

দখিনের সময় ডেস্ক:

ভারতের মহারাষ্ট্রের কঞ্জরভাট নামে আদিবাসীদের  সমাজের সদ্য বিবাহিত নারীদের পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হয় যে বিয়ের দিন পর্যন্ত তাঁদের কৌমার্য বজায় আছে। নবদম্পতির বিছানায় পাতা সাদা চাদরে রক্তের দাগ লাগলেই পাওয়া যায় প্রমাণ। তবেই সমাজ মেনে নেয় যে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর নিজের কৌমার্য প্রমাণে ব্যর্থ হলে নববধূর কপালে জোটে জুতোপেটা, অথবা বের করে দেওয়া হয় শ্বশুরবাড়ি থেকে। খবর সূত্র: বিবিসি।

“আমি তখন বেশ ছোট। বছর ১২ বোধহয় বয়স। একটা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম যে নববধূকে অনেক লোকে মিলে জুতো পেটা করছে। বুঝতেই পারিনি কেন মারছে সবাই মিলে ওই নতুন বউকে। কিছুটা বড় হয়ে গোটা বিষয়টা পরিষ্কার হয় আমার কাছে। সদ্য বিবাহিতা ওই নারী আসলে কৌমার্যের পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি,” বিবিসিকে বলছিলেন মারাঠি যুবক বিবেক তামাইচিকার।

আর যাতে কোনও নববধূকে বিয়ের পরেই কৌমার্যের পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে জুতোপেটা না খেতে হয়, তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে কয়েক দিন আগে বিবেক আর তাঁর কয়েকজন বন্ধু নিজেরাই মার খেয়ে এসেছেন। এই প্রথা বন্ধের উদ্দেশ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন বিবেক। ‘স্টপ দা ভি রিচুয়াল’ নামে একটা হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপও হয়েছে, যেটির ৬০ জন সদস্যের অর্ধেকই নারী। ‘ভি রিচুয়াল’ অর্থ ভার্জিনিটি রিচুয়াল, বা কৌমার্য পরীক্ষা।

পুণে শহরে একটা বিয়েবাড়িতে বিবেক আর তাঁর কয়েকজন বন্ধু এই কৌমার্য পরীক্ষা বন্ধের স্বপক্ষে প্রচার চালাতে গিয়েছিলেন। সেখানেই কঞ্জরভাট সম্প্রদায়ের মানুষজন মারধর করেন। পুলিশ সেখান থেকে চল্লিশ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে। ছোট আকারে প্রকাশিত সেই সংবাদটা দেখেই খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল যে, কৌমার্য পরীক্ষার মতো একটা মধ্যযুগীয় বর্বর প্রথা এখনও চলছে।

কীভাবে নেওয়া হয় কৌমার্যের পরীক্ষা?

বিয়ের ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ শেষ হওয়ার পরে নববিবাহিত দম্পতিকে একটা হোটেলের ঘরে পাঠানো হয়, সঙ্গে দেওয়া হয় একটা সাদা চাদর। যদি হোটেলের ভাড়া দিতে নববিবাহিত দম্পতির পরিবার অক্ষম হয়, তাহলে পঞ্চায়েতই এগিয়ে এসে সেই ভাড়া মিটিয়ে দেয়। ঘরের বাইরে অপেক্ষায় থাকেন দুই পরিবারের আত্মীয় স্বজনরা।

বিবেক তামাইচিকার বলছিলেন, “অনেক সময়ে ঘরের ভেতরে পাঠানোর আগে বরকে শিক্ষিত করে তোলার নাম করে মদ খাওয়ানো হয় আর পর্ণোগ্রাফি দেখানো হয়।” শারীরিক মিলনের শেষে যখন নবদম্পতি বাইরে আসেন, তখন দেখা হয় যে ওই সাদা চাদরে নববধূর রক্তের দাগ লেগেছে কী না। দাগ থাকলে নববধূ যে বিয়ের সময় পর্যন্ত কুমারী-ই ছিলেন, সেটাই মনে করা হয়। তবেই পঞ্চায়েত ওই বিবাহকে স্বীকৃতি দেয়। আর যদি সদ্য বিবাহিতা নারী সেই পরীক্ষায় ফেল করেন, তাহলে তার পরিণাম ভোগার জন্য তাঁকে তৈরি থাকতে হয়।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সোনিয়া নায়েক বিবিসিকে বলছিলেন, “প্রথমবার শারীরিক সম্পর্কের সময়ে যে নারীর দেহ থেকে রক্ত বেরবেই, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অনেক সময়ে প্রথমবার শারীরিক মিলন হলেও কুমারী মেয়েদের শরীর থেকে রক্ত নাও বেরোতে পারে। এর অনেক কারণ রয়েছে। কিন্তু রক্ত না বেরনো মানেই যে কোনও নারী কুমারী নন, এটা বলা অবৈজ্ঞানিক।”

‘কুমারী না হওয়ার অপরাধে” নববধূকে বেইজ্জত তো করাই হয়, এমনকি পেটানোও হতে পারে। আর স্বামীটি পেয়ে যায় সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে সঙ্গে সঙ্গে ত্যাগ করার অধিকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বাউফলে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চোখের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্মাণকাজে নিম্মমানের উপকরণ ব্যবহার করায় ক্ষুদ্ব প্রতিক্রিয়া...

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

Recent Comments