দখিনের সময় ডেস্ক
র্যাব ও এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর থেকে যত দ্রুত সম্ভব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ফের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে স্টেট ডিপার্টমেন্টে মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি আর শেরম্যানের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এ সময় শেরম্যান সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে অব্যাহত সহযোগিতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া বৈঠকে তারা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় এবং অভিন্ন বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শাহরিয়ার আলম এলডিসি সম্পর্কিত বিষয়ে ডব্লিউটিও-তে মার্কিন সহায়তা কামনা করেছেন। যাতে করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো একটি সুষ্ঠু এবং টেকসই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করতে পারে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। আসন্ন ২৭তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কোপ২৭) এ সংশ্লিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একটি কর্মমুখী আলোচনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বহিঃসমর্পন চুক্তি সম্পাদনের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। করোনা মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করায় মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তা দিয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার তিনি প্রশংসা করেন।
অন্যদিকে মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি বাংলাদেশের উচ্চ কোভিড-১৯ টিকার হার এবং মহামারি মোকাবিলায় ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি। এ ছাড়া কপ-২৭ এর আগে ‘গ্লোবাল মিথেন প্লেজ’ এ যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
ওয়েন্ডি আর শেরম্যান মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সম্প্রতি তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। বিশ্ব শান্তিরক্ষায় তারা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের শ্রম খাতে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে ডেপুটি সেক্রেটারি শেরম্যান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের ওপর জোর দেন। ইউক্রেন যুদ্ধ, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পায়।
পরে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল এলিন লুবাচ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-মার্কিন সহযোগিতা, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।