দখিনের সময় ডেস্ক:
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার রাস্তা থেকে মাহবুব আলী খান নামে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে পুলিশের তিন কনস্টেবলসহ অপহরণকারীদের একটি চক্র। তবে মুক্তিপণ দিয়েও রক্ষা হয়নি ওই ব্যবসায়ীর।
একটি মামলায় ভুয়া আসামি বানিয়ে নকল চালান ও চালানের ফরোয়ার্ডিং দিয়ে তাকে আদালতেও পাঠানো হয়। পাঁচ দিন কারাবাসের পর মাহবুব আলী খান জামিনে বের হয়ে বুঝতে পারেন, তিনি অপরাধী চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন। বিষয়টি আদালতের নজরেও আসে। এর পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং এক দোকানদারের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে পুলিশের তদন্তকারীরা তিন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে চিহ্নিত করেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সিআইডির কনস্টেবল মুন্সী আব্দুর রহমান, গাড়িচালক শেখ ফরিদ ও সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের কনস্টেবল নাজমুলসহ চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
এ ঘটনায় গত ৮ নভেম্বর আদালত এক লিখিত আদেশে জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকি। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এ ঘটনায় একটি মামলা করার জন্য সিআইডিপ্রধানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই মামলার কপি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩/এ রোডের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবসায়ী মাহবুব আলী খানকে আটকের পর ১০-১২ জন ব্যক্তি মারধর করেন। পথচারীরা মারধরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়পত্র দেখান। মারতে মারতে ধানমন্ডি লেকের কাছে নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশায় তুলে পল্টন এলাকায় নিয়ে যান।
চক্রটি মাহবুবকে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করেন। মারধরের পর পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান অপহরণকারীরা। এর পর ভয় আর মামলা থেকে বাঁচতে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং ও পাঁচটি বিকাশ নম্বরে ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা নেয় চক্রটি। মুক্তিপণের টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও ২ নভেম্বর শাহবাগ থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের একটি মামলায় ভুয়া গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ঢাকা মেট্রো (দক্ষিণ) আনিচুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, চক্রটি আসামির ভুয়া চালান ও চালানের ফরোয়ার্ডিং তৈরি করেছে। এই দুটি কাগজ তৈরি করে তারা আদালতে সোপর্দ করে। কাগজগুলো আদালতে শেষ মুহূর্তে দাখিল করে। কোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় একটু তাড়াহুড়া হলে সেই সুযোগটা তারা কাজে লাগায়। এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পল্টন থানায় সিআইডির পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ঘটনাটির তদন্ত করেছে।