Home লাইফস্টাইল মশাবাহিত এই ৫টি রোগ থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন

মশাবাহিত এই ৫টি রোগ থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন

দখিনের সময় ডেস্ক:
বিশ্বে মশা থেকে ২০টির মতো রোগ ছড়ায়। প্রায় ১০০ প্রজাতির মশা এসব রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। বাংলাদেশে মশাবাহিত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ বিরাজমান। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ম্যালেরিয়া
স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৭২টি থানায় এই রোগের উপস্থিতি রয়েছে। মূলত পার্বত্য ও সীমান্ত এলাকায়ই ম্যালেরিয়া বেশি দেখা যায়। পাহাড়-পর্বত থেকে বেড়িয়ে আসার পর কেউ যদি জ্বরে আক্রান্ত হন, তবে ম্যালেরিয়া সন্দেহ করা উচিত। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে থাকা পরজীবী জীবাণু প্রথমে মশাকে আক্রান্ত করে। পরে ওই মশা সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে তার শরীরেও জীবাণু প্রবেশ করে। ম্যালেরিয়ার উপসর্গের মধ্যে আছে কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর ও মাথাব্যথা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে এই রোগ।
ফাইলেরিয়া
কিউলেক্স মশার মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া ছড়ায়। এ রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদরোগও বলা হয়। বাংলাদেশের ৩৪টি জেলায় ফাইলেরিয়া রোগী দেখা যায়।
ডেঙ্গু
এডিস মশার মাধ্যামে ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময় বেড়ে যায়। সংক্রমণের শিকার হওয়ার পর রোগের উপসর্গ দেখা দিতে ৪ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, পেটে ব্যথা, মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা, বমি ভাব হয়।
চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়াও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। মশার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ চোখে পড়া শুরু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, ত্বকের ফুসকুড়ি, বমিভাব ও শরীরব্যথা, বিশেষত, হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া এর বিশেষ লক্ষণ। রোগ সেরে যাওয়ার পরও এই জোড়ের ব্যথা সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরব্যাপী ভোগাতে পারে।
জিকাভাইরাস
এই রোগের বাহক মশার বৈজ্ঞানিক নাম ‘এইডেস অ্যালবোপিকটাস’। জিকাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, অবসাদ এবং পেশিতে ব্যথা। আশার কথা হলো, এই ভাইরাসে আক্রান্ত সিংহভাগ রোগী কোনো রকম মারাত্মক জটিলতা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যায়। গর্ভবতী কোনো নারী এই ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হলে সন্তানের মধ্যেও ছড়াতে পারে জিকা। সে ক্ষেত্রে নবজাতকের কিছু সমস্যা হতে পারে।
কীভাবে মশাবাহিত রোগ থেকে সুস্থ থাকবেন
মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, আক্রান্ত হওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরনের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই।
১. পানি জমিয়ে রাখা যাবে না
স্যাঁতসেঁতে জায়গা ও স্থির জলযুক্ত স্থানগুলো মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে সুপরিচিত, বিশেষ করে এডিস মশা। মশার বংশবৃদ্ধি এড়াতে আশপাশের সব এলাকা শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখা দরকার। ছোটবড় কোনো গর্তেই যেন পানি জমতে না পারে, তা নজর রাখা প্রয়োজন। বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কনটেইনার—কোথাও যাতে তিন দিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
২. মশার কামড় থেকে সতর্ক থাকা
সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সব সময় ফুল শার্ট ও প্যান্ট পরতে হবে। হালকা রঙের কাপড় পরুন। ‘মসকুইটো রেপেলেন্ট’ ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। পায়ে মোজা পরিধান করতে হবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুই রোগের জন্যই দায়ী এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার আগে কামড়ায়। ফলে এই দুই সময় ঘরের দরজা–জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
৩. ঘরের মধ্যে মশা যাতে প্রবেশ করতে না পারে
মশাসহ বিভিন্ন পোকামাকড় অন্ধকার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেশি আকৃষ্ট হয়। বাড়িতে বসবাসের জায়গাগুলোয় যেন বায়ু চলাচল করে, পরিষ্কার থাকে তা বিশেষভাবে লক্ষ রাখা দরকার। মশার উৎপাত যে সময় বেশি থাকে, সেই সময় বাড়ির জানলা, দরজা বন্ধ রাখুন। জানলা-দরজায় নেট ব্যবহার করে মশার প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন।
৪. ঘুম নিরাপদে হোক
দিনে ও রাতে ঘুমের সময় মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা উচিত। খোলা ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ঘুমানো এড়িয়ে চলুন।
৫. ঘরোয়া উপায়ে মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচান
ইউক্যালিপটাস তেল, ল্যাভেন্ডার অয়েল, দারুচিনি তেল, তুলসীপাতার তেল, থাইম অয়েল কয়েক ফোঁটা ময়েশ্চারাইজারের সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকের অনাবৃত অংশে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে বাইরে বের হলেও মশার কামড় থেকে বাঁচবেন।
*ডা. নওসাবাহ্ নূর: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বাংলাদেশে সর্প দংশন বাড়ে বর্ষাকালে

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশে বর্ষাকালে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠে সাপের দংশন। বিষধর সাপের দংশনে হরহামেশাই মানুষের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের...

তীব্র গরমেও ঘর ঠান্ডা রাখার সহজ উপায়ে

দখিনের সময় ডেস্ক: তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। হিট অ্যালার্ট জারি রয়েছে। এ অবস্থায় ঘরে ফিরেও স্বস্তি মিলছে না। একটু শীতলতার খোঁজে মানুষ। যাদের ঘরে এসি...

দংশন করা সাপে ছবি তুলে রাখার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দখিনের সময় ডেস্ক: চিকিৎসকরা মূলত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সাপে কামড়ানোর সময় সেটি কী প্রজাতির সাপ বা...

গরমের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে সাপের ছোবলে মৃত্যু

দখিনের সময় ডেস্ক: রাতে তীব্র গরমের হাত থেকে বাচতে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে বসেছিলেন ইমামুল ব্যাপারী (৩৪)। এ সময় তাকে বিষধর সাপে কামড় দেয়।...

Recent Comments