Home আন্তর্জাতিক যা ছিলো ইরানের ‘নীতি পুলিশ’

যা ছিলো ইরানের ‘নীতি পুলিশ’

দখিনের সময় ডেস্ক:

ইরানের ‘নীতি পুলিশ’ মূলত ফারসি ‘গাতে-ই এরাদ’ বা ‘গাইডেনস প্যাট্রোল’ নামে পরিচিত। তাদের কাজ, ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ঠিক করা কঠোর পোশাকবিধি অমান্যকারীদের আটক করে ব্যবস্থা নেয়া। এই নীতি পুলিশ দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলো।

‘নীতি পুলিশের’ প্রতিটি ইউনিটে একটি করে ভ্যান ছিলো। এ ভ্যানে বাহিনীর নারী ও পুরুষ উভয় সদস্য থাকেন। তারা ব্যস্ত জনপদে টহল দেন। কেউ ‘নীতি’ লঙ্ঘন করলে সতর্ক করে নোটিশ দেয় তারা। অনেককে করা হয় জরিমানা। প্রয়োজনে কাউকে আটক করে থানা বা সংশোধনাগারেও পাঠানো হয়। পোশাক ও আচরণের শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি পুরুষ অভিভাবকদের ডেকে আটক নারীকে ছেড়ে দেয়া হয়।

ইরানের ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব হয়। তবে কয়েক দশকেও দেশটি ধর্মীয় নেতাদের তৈরি পোশাকনীতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। আইন অনুযায়ী দেশটির নারীদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক। এমন লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, যাতে শরীরের গঠন বোঝা না যায়। তবে, ইরানে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির অনেক নারী আঁটসাঁট পোশাক পরেন। তারা ঊরু পর্যন্ত কোট পরেন। পাশাপাশি এমন উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ পরেন, যাতে মাথার অনেক চুল বেরিয়ে থাকে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লব নারীদের রক্ষণশীল পোশাক পরার বিষয়টিকে অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে কঠোর হিজাববিধি নিয়ে সেই সময় থেকেই দেশটিতে একটি বিরোধ আছে। ইসলামি বিপ্লবের শুরুর বছরগুলোয় ধীরে ধীরে নারীদের ইসলামিক পোশাক পরার জন্য নিয়ম আরোপ করে রাষ্ট্র। ইরানে ইসলামি বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি। তিনি ছিলেন হিজাবের পক্ষে। তাই বিপ্লবীরা তাদের নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেশটির সড়কে যথাযথ পোশাক না পরা নারীদের ওপর চড়াও হতেন।

পরে নারীদের পোশাক পরার বিধি নিয়ে দেশটির ধর্মীয় নেতা ও মন্ত্রীদের তৈরি একাধিক বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি অফিসে কোনো নারী হিজাব ছাড়া যেতে পারবেন না। এ নিয়ে ১৯৮৩ সালে একটি আইন করা হয়। আইনে যেসব নারী ‘পর্দা’ করবেন না, তাদের ৭৪টি দোররা মারার বিধান রাখা হয়। এদিকে সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ খাতামির সময় দেশটির জনসমাগমে নারীদের পোশাক ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে এসব নিয়মনীতি কিছুটা শিথিল করা হয়।

খাতামির পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হন মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। তিনি অতিরক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার সময় ইরানের ‘নীতি পুলিশের’ নাম রাখা হয় ‘গাতে-ই এরাদ’। নীতি পুলিশের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা ইরানে ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় অন্যতম বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। সংস্কারপন্থি প্রার্থীরা এ বাহিনী বিলোপের দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু নীতি পুলিশ বিলুপ্তে শেষ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি; বরং নানা সময়ে নীতি পুলিশের কঠোর ব্যবস্থার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসে।

আর এবার এসেছে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিষয়টি। যথাযথ নিয়ম মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে মাহসাকে আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ। আটকের পর নীতি পুলিশের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে দেশটির রাজধানী তেহরানে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। এর পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ইরানবাসী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বিদেশে চিকিৎসা নিরুৎসাহিত করতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসা নিরুৎসাহিত করতে হবে। সেজন্য তিনি দেশে চিকিৎসকদের আরো বেশি সেবার মনোভাবী হওয়ার অনুরোধ জানান।...

তীব্র গরমে ছয় বিভাগে স্বস্তির খবর

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশজুড়ে গরমের হাঁসফাঁস পরিস্থিতির মধ্যেই ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেওয়া পূর্বাভাসে...

সারা দেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা বাড়তে পারে এবং অব্যাহত থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ৩ দিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট...

ডাল-ভাত নয়, মানুষ এখন মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে: প্রধানমন্ত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক: কৃষির উন্নয়নে সমবায় পদ্ধতি চালু করতে পারলে জীবনেও খাদ্যের অভাব হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ...

Recent Comments