Home লাইফস্টাইল শীতে শরীর সুস্থ রাখতে যা করতে পারেন

শীতে শরীর সুস্থ রাখতে যা করতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক:
আবহাওয়া বদলের এই সময়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশ কমে যায়। ফলে ঠাণ্ডা লাগা, হাঁচি, জ্বর, সর্দি, গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এই শীতকালেও আপনি থাকতে পারেন ফিট। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন
শীতের সময় সক্রিয় এবং উষ্ণ থাকাটা খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যায়াম উষ্ণ থাকতে সাহায্য করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ায়। শীতে হাঁটা এবং দৌড়ানো হলো বাইরের ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ। সম্ভব হলে জিমেও যেতে পারেন। তবে যাঁদের পক্ষে শীতে বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না, তাঁদের জন্য রয়েছে সক্রিয় এবং উষ্ণ থাকার অনেক উপায়। ব্যায়ামের ভিডিও দেখে দেখে ঘরেই ওয়ার্ক আউট, ঘরে বা ছাদে জগিং অথবা হাঁটা ইত্যাদি করতে পারেন।

নিয়ম করে হাঁটুন: শীতের সময় হাঁটাহাঁটি বেশ ভালো ব্যায়াম। তবে কুয়াশা ও শিশিরের হাত থেকে বাঁচতে খুব ভোরে বা সন্ধ্যায় না হেঁটে সময়টা পরিবর্তন করে নিন। সকালের নরম রোদ ওঠার পর অথবা বিকেলের দিকে হাঁটতে বের হন। পায়ে পরুন মোজা ও কেডস। হাঁটা শুরুর আগে ওয়ার্ম আপ করে নিন। প্রথমে ১০ মিনিটের মতো হাঁটুন। ফিটনেস লেভেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার গতিও বাড়িয়ে দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না জগিং করার সক্ষমতা অর্জন করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটার গতি বাড়াতে থাকুন। এরপর চাইলে দৌড়ান বা জগিং করুন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটার রাস্তাটি যেন নিরাপদ হয়।

ভালো ঘুম জরুরি: স্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টি ও ব্যায়ামের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঘুম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ সময় ধরে আরামদায়ক ঘুমানোর জন্য শীতের সময়টা বেশ সহায়ক। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং শীতকালে সারা দিন উদ্যমী রাখে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম কার্যকর রাখা, স্ট্রেস হরমোন দূর করাসহ আরো অনেক কাজে সহায়তা করে। এ জন্য ঘুমের সময়সূচি ঠিক রাখুন। বিছানায় যাওয়ার জন্য একটি নির্ধারিত সময় ঠিক করুন। অযথাই রাত জাগবেন না। ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে ফোনটি রেখে দিন।
যথাযথ পোশাক পরুন: শীতে কী ধরনের পোশাক পরেছেন, তা নিশ্চিত করুন। শীত থেকে রক্ষার জন্য সুতির তৈরি আরামদায়ক পোশাক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
রোদ পোহান: ভিটামিন ‘ডি’র প্রধান উৎস হলো রোদ। শীতের সময় রোদ পোহালে ভালো থাকে শরীর; পূরণ হয় ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি। যাঁরা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই প্রতিদিন রোদ পোহাবেন। এতে হাড়ের ব্যথা কমে, ঘুম ভালো হয়, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর করে, জন্ডিস দূরে রাখে ইত্যাদি। সকাল ৮টার পর দুপুরের সময় পর্যন্ত প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রোদে থাকলে উপকার মেলে। আবার অতিরিক্ত সময় রোদে থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়—এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করান: অনেকে শীতকালে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখেন। এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে রাতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। কিন্তু দিনের বেলায় ঘরে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করান, পর্দাগুলো খুলে দিন। এতে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে বাঁচা যাবে।
মাস্ক পরুন: শীতকালে বাতাসে প্রচুর ধূলিকণা থাকে। এগুলো নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে যায়। এ জন্য ঘরের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। যাঁরা অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন। তবে মাস্ক ব্যবহারের ফলে কারোর যদি শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তাহলে মাস্ক পরা বন্ধ করে দিন।
ঘাম ঝরান: শীতে সহনীয় ব্যায়ামগুলো করুন। সম্ভব হলে কিছুটা ঘাম ঝরান। এতে শরীরে ব্যবহৃত শক্তির পরিমাণ নির্দেশক বেসাল মেটাবলিক রেট (বিএমআর) বাড়ে। ফলে রক্ত সঞ্চালন সহজ হয়।
ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল বা ভলিবলজাতীয় খেলাধুলা শীতের সময় বেশ ভালো জমে। এতে শারীরিক নানা উপকারও মেলে। সম্ভব হলে সকালে বা বিকেলে এই খেলাগুলো খেলুন।
প্রচুর পানি পান করুন: শীতে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। কম পানি পানের ফলে শরীর আরো শুষ্ক-রুক্ষ হয়। এ ছাড়া দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমিভাব, ব্রণ, জ্বালাপোড়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়াসহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে শীতের সময় বেশি পানি পান করলে দেহ থাকে তরতাজা ও প্রাণবন্ত। এতে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের রোগীদের বেশ উপকার হয়। এ জন্য প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার পানি পান করুন। সমস্যা মনে হলে প্রয়োজনে হালকা গরম করে নিন।
ফলমূল ও শাক-সবজি: এখন বাজারে প্রচুর ফলমূল ও মৌসুমি শাক-সবজির সমাহার। ভিটামিন ‘সি’ ও জিংক সমৃদ্ধ ফলমূল এই সময় বেশি খান। ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার সর্দি, কাশি দূর করে, ত্বকও ভালো রাখে। আর টাটকা ফল ও সবজিতে আছে বায়োটিন, যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। এ জন্য খেতে পারেন কমলা, মাল্টা, লেবু, আমড়া, আমলকী, কামরাঙা, রসুন ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিদিন খান প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সবজি, বিশেষ করে ফুলকপি, আপেল, মটরশুঁটি, শিম, গাজর ইত্যাদি।
ওজন কমান: অনেকেই শীতকালে কম চলাফেরা ও হাঁটাহাঁটি করেন, প্রাতঃভ্রমণ কমিয়ে দেন। গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে খাওয়া হয় বেশি, কিন্তু ক্যালরি ক্ষয় হয় কম। বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে শরীরে মেদ জমে তাড়াতাড়ি। এর ফলে অনেকেই শীতকালে খানিকটা ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। তবে ওজন কমানোর উপযুক্ত সময় হতে পারে শীতকাল। কেননা শীতকালীন খাবারগুলোও ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। তবে খেতে হবে সুষম ও কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আরো কিছু
সারা দিন ফিট থাকার জন্য কিছু সহজ উপায় আছে। এ জন্য অলসতা কাটাতে হবে। যেমন—
♦ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরই পাঁচ বা ১০ মিনিট হাত-পা প্রসারিত করুন।
♦ অফিস বা বাসায় লিফট এড়িয়ে চলুন, পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
♦ কর্মস্থল কাছাকাছি হলে হেঁটেই যাতায়াত করুন। বেশি দূরে হলে কিছুদূর গিয়ে গাড়ি বা রিকশায় উঠুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

চীনের সবচেয়ে ধনী টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং

দখিনের সময় ডেস্ক: টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং (৪১) চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করেছেন। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ...

প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি হার্টের জন্য ভালো?

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমকে সবচেয়ে উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত রয়েছে। ডিম...

মানবাধিকার কর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

দখিনের সময় ডেস্ক: বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কঠিন...

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

Recent Comments