দখিনের সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশ ইস্যুতে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে দুই পরাশক্তি । বাংলাদেশকে নিয়ে দুই পরাশক্তির এ স্নায়ুযুদ্ধে অবশ্য চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে ঢাকা। রুশ ভাষার ব্রিফিংয়ের একটি ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট ঢাকার গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে রুশ দূতাবাস। বিবৃতিটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। এরপর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই মস্কোর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দুই পরাশক্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থান পুনরায় প্রতীয়মান হয়।
মস্কো বলছে, বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই নীতি কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?
গত ২২ ডিসেম্বর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মন্তব্য করেন, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা বলে মনে করে রাশিয়া। রুশ ভাষার ওই ব্রিফিংয়ের একটি ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট ঢাকার গণমাধ্যমে সরবরাহ করে রুশ দূতাবাস। বিবৃতিটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও রয়েছে।
‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা’ উপশিরোনামে প্রচারিত ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্টে বলা হয়, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শাহীনবাগে ঘটে যাওয়া বহুল প্রচারিত ঘটনাটি রাশিয়া নোটে নিয়েছে। সেখানে স্থানীয় একটি সংগঠনের বাধার মুখে পড়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যা তার জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিল। ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক সমর্থকের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্মীরা। রাশিয়া মনে করে, ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের তৎপরতারই একটি প্রত্যাশিত ফল। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগতভাবে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ অভিযোগের সঙ্গে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুক্ত করেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান মিশনের তার (আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের) সহকর্মীরাও একই ধরনের কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করছেন।
ব্রিফিংয়ে মারিয়া জাখারোভা আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মৌলিক নীতিগুলো লঙ্ঘন করে এমন পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, যদি কেউ প্রশ্ন করতে চান- ‘কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা’ শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে এই বিষয়গুলো দেখার আহ্বান জানাই। এগুলোই মৌলিক নীতি।
এরপর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই মস্কোর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক টুইটে প্রশ্ন করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাশিয়া, এটা কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা এবং ইউরোপে তার প্রভাব কেমন, তা নিয়ে টুইটারে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ঢাকাস্থ রুশ দূতাবাস।
অন্যদিকে ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে ঢাকাস্থ মস্কো, ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিরা একাধিকবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে। বাংলাদেশ বরাবরই সংলাপের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে আসছে। শাহীনবাগের ঘটনা নিয়ে মস্কো-ওয়াশিংটন বাগ্যুদ্ধের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, এসব বিষয় আমরা জানি না। আপনারা জানেন। বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করবেন কিনা? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমরা জানি না। আমরা চুপ আছি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহীনবাগে একটি বাড়িতে গুমের শিকার স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সে সময় ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেকটি সংগঠনের সদস্যরা রাষ্ট্রদূতের অবস্থান করা বাড়ির প্রবেশদ্বারে তাকে ঘিরে ধরে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ দেখা দেয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তা অবহিত করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এর পর থেকে এ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের মন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন।