Home শীর্ষ খবর গোজামিলে ভরপুর ৪৮ নদী সমীক্ষার রিপোর্ট, জলে গেলো সরকারের ৩৪ কোটি টাকা

গোজামিলে ভরপুর ৪৮ নদী সমীক্ষার রিপোর্ট, জলে গেলো সরকারের ৩৪ কোটি টাকা

আলম রায়হান:
প্রকল্পের নামে সরকারি টাকা নয়ছয় করার বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এর ধারায় যুক্ত হয়েছে ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্প। সরকারি অর্থায়নে ৩৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। এ প্রকল্পে খরচ দেখানো হয়েছে ৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।  কিন্তু পুরো টাকাই জলে গেছে।
দখল-দূষণ থেকে দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ‘৪৮ নদী সমীক্ষা’ প্রকল্প গ্রহণ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।  এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৪৮টি নদীতে সমীক্ষা চালিয়ে ৩৭ হাজার ৩৯৬ দখলদারের তালিকা করা হয়। নদী দখলদারদের তালিকা তৈরিতে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু করোনার কারণে এক বছর পিছিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয় গত ডিসেম্বরে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আওতায় এ প্রকল্পের আওতায় নদী দখলকারী হিসেবে ৩৭ হাজার ৩৯৬ ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নদ-নদী দখলদার হিসেবে  চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এ কাজ যথাযথ নিয়মে করা হয়নি। এমনকি মানা হয়নি সংশ্লিষ্ট আইনও। ফলে কমিশন এ রিপোর্টগুলো প্রকাশ করতে বারণ করে। কিন্তু এরপরও রিপোর্টগুলো প্রায়  ৬শ’ পৃষ্ঠার বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এ সব তথ্য দেয়া হয়েছিলো ওয়েবসাইটেও। কিন্তু অসংখ্য মামলায় পড়ায় আশংকায় ওয়েব সাইট থেকে এ তথ্য সরিয়ে ফেলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সূত্র এমনটাই জানিয়েছে। সূত্র আরো জানিয়েছে, এ প্রকল্পের জন্য নিম্নমানের জিনিস পত্র কেনা হয়েছে। যার মধ্যে চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কিছু অকশনে বিক্রি করার উপায়ও নেই। কম্পিউটারগুলো পরিণত হয়েছে আবর্জনায়।
সূত্র বলছে, গত ১৫ ডিসেম্বর নদী রক্ষা কমিশনের ৩২তম সভায় বলা হয়, ‘হাইকোর্টে নির্দেশনা মোতাবেক সিএস রেকর্ড অনুযায়ী না সমীক্ষা না করে পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী নদীর অবৈধ দখল বা নদী তীরবর্তী স্থাপনার তালিকা করায় উক্ত তালিকা প্রকাশ করলে আইনগত ও প্রশাসনিক সমস্যা হতে পারে। তাই প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ৩০০ কপিতে অবৈধ দখল, নদী তীরবর্তী স্থাপনার নাম, তথ্য অথবা সংখ্যা কোনটিই প্রকাশ করা যাবে না।’
সূত্রমতে ওই সভায় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মালিক ফিদা আব্দুল্লা খান বলেন, হাইকোর্টের সিএস রেকর্ড মোতাবেক অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়নি বিধায় এই প্রকল্পের আওতায় চিহ্নিত ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম কমিশনের ডেটাবেইজেও অন্তর্ভূক্ত কিংবা প্রকাশ করা যাবে না। এ বিষয়ে কমিশনের সদস্যদের বক্তব্য হচ্ছে, হাইকোর্টের এক রায়ে সিএস রেকর্ডের ভিত্তিতে অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে পানি আইন ২০১৩-এর ভিত্তিতে। এ কারণে প্রকল্পে চিহ্নিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ও তালিকা কমিশনে দেয়া প্রতিবেদনে এবং ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এবং তা প্রকাশ করার সুযোগ নেই।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে দখলদারের তালিকা বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক ইকরামুল হক  বলেন, যেসব দখলদারের তথ্য পেয়েছি তা এরই মধ্যে সব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি যেহেতু নদী রক্ষা কমিশনের এখন এটি কী করবে তা কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে। দখলদারদের নাম ও তালিকা প্রকাশের পর মামলা-মোকদ্দামাসহ নানা ঝামেলা হতে পারে এমনটা ভেবেই হয়তো চেয়ারম্যান সাহেব নির্দেশনা দিয়েছেন।’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ মুহুর্তে ৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের সমীক্ষার সমাপনী প্রতিবেদনটি কমিশনে গৃহীত হয়নি। তথ্যগুলো আমরা বুঝে নিয়েছি। তিনি বলেন, যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া দখলদার হিসেবে কারো নাম প্রকাশ করা যায় না।  তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদী দখলদারদের তথ্য করতে বলেছেন। কিন্তু প্রকল্পের লোকজন করেছেন পানি আইন অনুযায়ী। আমার পরিষ্কার কথা হলো, পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দখলদার বলা যাবে না। এ কারণেই আমরা প্রতিবেদন জমা নেইনি। ফলে প্রকল্পের পুরো টাকাটাই জলে গেছে।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী আরো বলেন, ২০০৯ সালে বিচারপতি খায়রুল হক যে রায় দিয়েছেন, সেটি পূর্ণাঙ্গ রায়। এই রায় অনুসারেই নদী সংরক্ষণের কাজ করা উচিত। ওই আইনের আলোকে ব্যবস্থা নিলে নদীর জমি, খালের জমি, জলাভূমির জমি সবই উদ্ধার করা সম্ভব।

অকশনে বিক্রির অপেক্ষায় প্রকল্পের চেয়ার টেবিল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

মানবাধিকার কর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

দখিনের সময় ডেস্ক: বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কঠিন...

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

সন্তানের অত্যাচারে শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যা

দখিনের সময় ডেস্ক: সৈয়দ আলী আকনে (১০৪) নামের এক শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিষপানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সৈয়দ আলী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী...

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সিইসি

দখিনের সময় ডেস্ক: নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন করতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা দরকার। সবার সহযোগিতা...

Recent Comments