Home লাইফস্টাইল গরমে ঘাম ও ঘামাচি এবং চিকিৎসা

গরমে ঘাম ও ঘামাচি এবং চিকিৎসা

দখিনের সময় ডেস্ক:
গরমকালে ত্বকে নানা সমস্যা ও ঘামাচি খুব সাধারণ একটি সমস্যা। বড়দের তো বটেই, ছোটদের মধ্যেও ঘামাচি দেখা দিয়ে থাকে। ঘামাচি বড় কোনো রোগ নয়। তবে এ কারণে জ্বালাপোড়া ও ত্বকে চুলকানিতে ছোট্ট শিশুরা খুব কষ্ট পায়। একে বলে মিলিয়ারিয়া রুব্রা। মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টলাইনও বলা হয়। পেট, বুক, ঘাড়, নিতম্ব ও ভাঁজযুক্ত স্থানে সবচেয়ে বেশি ঘামাচি হয়ে থাকে।
ঘামাচির কারণ : দীর্ঘ জার্নি বা বেশি বেশি ঘামলে ঘামাচি দেখা দেয়। আসলে বেশি ঘামলে ত্বকের রোম ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। ঘাম বেরোতে না পারায় দেখা দিয়ে থাকে ঘামাচি। শিশুদের রোম ছিদ্র ছোট। ফলে ঘামাচিও বেশি দেখা দেয়।
লক্ষণ : ঘামাচি ছোট ছোট লাল রঙের ফোড়ার মতো দেখায়। এতে ত্বক চুলকায়। ফলে শিশুরা কাঁদতে থাকে। কাপড়ে ঘষা খেলে জ্বালা বাড়ে।
ঘামাচি হলে করণীয় : ঘামাচি যাতে না হয়, সেজন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। খরতাপ থেকে দূরে থাকুন এবং ত্বক শুকনো রাখুন। শিশুর পোশাক খুলে কিছুক্ষণ ছেড়ে দিন। ঠা-া পানিতে গোসল করান। ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন। শিশুকে ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় পরিয়ে দিন। শিশুর যাতে ঘামাচি না হয়, সেজন্য তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে শিশুর গা শোকাবেন না। তাপমাত্রা কমাতে ফ্যান চালিয়ে রাখুন। ত্বকের রোগের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ক্রিম ব্যবহার করতে যাবেন না। শিশু যাতে প্রাকৃতিক বাতাস পায়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। গরমে শিশুর শরীরে ঘাম জমে যে ঘামাচি দেখা দেয় এবং তা থেকে সৃষ্ট চুলকানি ও জ্বালা কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। তাতে শিশু সাময়িক স্বস্তি পেতে পারে। যেমন- ঠা-া পরিবেশে রাখুন। প্রচলিত আছে, ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে গোসল করলে ঘামাচি সেরে যায়। ঘরে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে ভালো হয়। না থাকলে ফ্যানের বাতাসও উপকারী। বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাবধানতা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা : সন্তানকে রোদ থেকে দূরে রাখুন। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের মধ্যে শিশুদের রাখতে পারলে ভালো। বাইরে নিয়ে গেলে তাদের ছায়ায় রাখুন। এছাড়া গরমে শিশু যাতে ডিহাইড্রেশনের শিকার না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন। এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান করানো ভালো। গ্রীষ্মকালে শিশুদের অবশ্যই হালকা পোশাক পরানো উচিত। আবার প্লাস্টিকের স্তরবিশিষ্ট ডায়পার পরাবেন না। ঘাড়, বাহুমূল, জঙ্ঘা ও ভাঁজ হয়- এমন অংশে ঘাম বেশি জমে। এই স্থানগুলো ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। স্থানগুলো যাতে শুকনো থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন। সন্তান যদি ঘনঘন ঘেমে যায়, তা হলে ত্বক ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিন। ত্বক শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ঘরোয়া উপায় শিশুর ঘামাচি না কমলে এবং চুলকানোর কারণে রক্ত বেরোলে বা ঘা হয়ে গেলে বিলম্ব না করে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা : ঘামাচিতে লাল ভাব, ঘা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু দিন কিউরিল অয়েনমেন্ট ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে। ক্যালামিলন লোশন ঝাঁকিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত শরীরে ঘণ্টাখানেক ধরে লাগিয়ে রেখে সেটি ধুয়ে ফেলতে হবে। এ রকম তিন-চার দিনের বেশি করা যাবে না। আর যদি ফোস্কা, ঘা, ফোড়া হয়ে যায় বা ত্বকে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতেই থাকে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া চিকিৎসক উপসর্গ দেখে অন্যান্য চিকিৎসাপত্রও দিতে পারেন।
লেখক : ডা. জাহেদ পারভেজ, চর্ম যৌন ও ত্বক বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক, চর্ম, যৌন ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলানগর, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

চীনের সবচেয়ে ধনী টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং

দখিনের সময় ডেস্ক: টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং (৪১) চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করেছেন। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ...

প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি হার্টের জন্য ভালো?

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমকে সবচেয়ে উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত রয়েছে। ডিম...

মানবাধিকার কর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

দখিনের সময় ডেস্ক: বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কঠিন...

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

Recent Comments