আলম রায়হান:
বরিশালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এরপরও এই নির্বাচনে নানান ধরনের ইকেোয়েশণ মিলাতে হচ্ছে এই দলটিকে। আবার রাজনীতির এই অংক কেন্দ্র এবং স্থানীয় হিসেবে দুই সূত্রে করতে হচ্ছে রকম। চলমান র্নিবাচনে মেয়র প্রার্থী প্রধানত তিনজন। এদের জয়-পরাজয় র্নিধারিত হবে বিএনপির ভোটে।
বরিশাল অঞ্চলে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ভোট ব্যাংক অনেক শক্তিশালী। আর সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বরিশাল মহানগরে। ২০০৩ সাল থেকে সিটি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে নগরীতে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির ভোট দ্বিগুণেরও বেশি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান সরোয়ার ৪২ হাজার ৬২১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের এনায়েত পীর পেয়েছেন, ৩২ হাজার ২৬৫ ভোট। মনে হতে পারে, বিএনপি-আওয়ামী লীগের ভোটের ব্যবধান মাত্র দশ হাজার। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। কারণ ওই নির্বাচনে বিএনপির আরো দুই নেতা প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ২০ হাজার ২৪৮ ভোট এবং এবাদুর রহমান চাঁন পেয়েছেন ১৩ হাজার ৮৫৬ ভোট।
বরিশাল সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালে। এ নির্বাচনে ছাত্রদল ও জাতীয় পার্টি থেকে গড়ে ওঠা বুদ্ধিদীপ্ত শওকত হোসেন হিরণ ৪৬ হাজার ৭৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মাত্র পাঁচশ’ ভোট কম পেয়ে পরাজিতহন বিএনপি মনোনীত সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। তিনি বরিশাল ও বিএনপিতে বহিরাগত হিসেবে পরিচিত। এখানেই হিসেব পর্ব শেষ নয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির আহসান হাবিব কামাল পেয়েছেন ২৬ হাজার ৪১৬ ভোট ও এবাদুর রহমান চান পেয়েছেন ১৯ হাজার ৬২৬ ভোট।
বরিশাল সিটির ২০১৩ সালে নির্বাচনে ৬৬ হাজার ৭৭১ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন আওয়মী লীগের প্রার্থী সিটি মেয়র শওকত হেসেন হিরণ। আর ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। অবশ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাকালেই ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে গঞ্জিকাসেবীর আচরণকে অতিক্রম করে ঘোষিত ফলাফল অনুসারে বিএনপির মজিবুর রহমান সরোয়ার পেয়েছে ১৩৪১ ভোট এবং হাসানাতপুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন ১লাখ ৯ হাজার ৮০৩ ভোট। একটি প্রবচন আছে, ‘গাজার নৌকা পাহাড় ডিঙ্গায়’ এটি ধর্তব্যের বিষয় নয়।
বরিশালের সিটি নির্বাচনের ২০১৮ সালের গাঁজাখুরি ফলাফল বিবেচনার বাইরে রাখলে দেখা যাবে, বাকী চারটি সিটি নির্বাচনেই মাজুল অবস্থন ছিলো নৌকা। সেই বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনে নৌকার কান্ডারী হয়েছেন ক্লিন ইমেজের খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি এবার বিএনপির বদলে মুখোমুখি হয়েছেন ইসলামী শাসতন্ত্র আন্দোলনের। আর ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। বিএনপি ঘরানার ‘বাছুর প্রার্থী’ হিসেবে আছেন কামাল তনয় রূপন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির ভোট কোন দিকে যাবে? সূত্র বলছে, বিএনপি এখন আছে সাখের করাতের নীচে। নৌকা বিজয়ী হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর নৌকা পরাজিত হলে কঠিন অবস্থায় পড়বে বরিশাল বিএনপির রাজনীতি। কারণ তখন তাৎক্ষনিকভাবে সেরিনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর রাজনীতি মোকাবিলা করতে হবে বরিশাল বিএনপিকে। আর মজিবুর রহমান সরোয়ারের অনুপস্থিতিতে যা মোটেই সহজ হবে না বরিশাল বিএনপির জন্য।