কৌশলের পথে হাটছে হেফাজত, লকডাউন প্রত্যাহারের অপেক্ষা

আলম রায়হান:

মামুনুল হকের নারী কাহনসহ গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহ হেফাজতে ইসলামকে বড় ধরনের সংকটে ফেলেছে। পরিস্থিতিটা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে হেফাজত এবং সরকারকে। অথবা সুযোগটা পুরো কাজে লাগাতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। এদিকে বিরাজমান বাস্তবতায় কৌশনের পথে হাটছে হেফাজত। এ ক্ষেত্রে প্রধান হচ্ছে, লকডউন প্রত্যাহারের অপেক্ষায় কালক্ষেপন করা।

ধর্মের ছদ্মাবরণে অরাজনৈতিক পরিচয়ে রাজনীতিতে দানবীয় শক্তি অর্জনকরেছে হেফাজত। এর ভিতরে বাইরে কালো রাজনীতির প্রভাব বিভিন্ন সময় প্রমানিত হয়েছে। ২০১৩ সালে এই রাজনীতি সাফল্যের প্রায় দোড়গোড়ায় পৌছেগিয়েছিলো। সেই হেফাজত এখন নিজকে ‘হেফাজত করার’ সংকটে পড়েছে। এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মাওলানা মামুনুল হকের নারী কাহনের ঘূর্নিপাকে পড়ার কারণে। সবমিলিয়ে মহা সংকটে আছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

এ কথা স্বীকারও করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জেহাদী। তিনি বলেছেন, হেফাজততো অবশ্যই সংকটে পড়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তা মনে করছি। কিছু মানুষ বায়তুল মোকাররমে একটা অঘটন ঘটিয়েছে, অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায়। এটাকে কেন্দ্র করেই হাটহাজারী, বি-বাড়িয়া এবং বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা হয়েছে এবং আহত-নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে হেফাজতের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলেন মনে করেন নুরুল ইসলাম জেহাদী।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় গত ২৬শে মার্চ থেকে তিন দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানা আক্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার নানা ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ১৭জনের।

সূত্রমতে, মামুনুল হকের নারী কাহনে হঠাৎ বেকায়দায় পড়া হেফাজতের এখন মূল লক্ষ হচ্ছে, সময় ক্ষেপন করা। লকডাউন শেষে মাদ্রাসা থুললে আবার মাঠে নামবে হেফাজত। এমনটাই ধারণা করছেন বিভিন্ন মহল। এরই মধ্যে লকডাউন প্রত্যাহার বা শিথিল করার আলামত শুরু হয়েছে। রবিবার (২৫ এপ্রিল) থেকে দোকানপাট ও শপিংমল যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। এরপর শুরু হবে হয়তো গণপরিবহন।জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হলে চাপ বাড়বে মাদ্রাসা খোলার। সূত্রমতে, মাত্রাসা খোলার পর হেফাজত আরএক দফা শক্তির মহড়া দিতে পারে। লকডাউনই হেফাজতের জন্য বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লকডাউন যে হেফাজতের জন্য কতবড় মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হয়তো নিজের অজান্তেই বলে ফেলেছেন সংগঠনটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। ২২ এপ্রিল তিনি বলেছেন, “ লকডাউন তুলে নিন। আমার কাছে তালিকাটা পাঠান, আমি অভিযুক্তদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জেলে চলে যাবো; একজন পুলিশও পাঠাতে হবে না। এর বিনিময়ে আপনারা লকডাউন তুলে নিন।” এর আগেও লকডাউন নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ১১ এপ্রিল বিকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের এক জরুরি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জুনায়েদ বাবুনগরী লকডাউনের নামে রমজান মাসে মাদ্রাসা, মকতব, হিফজ বিভাগ বন্ধের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।