Home প্রযুক্তি ইন্টারনেটে নীল ছবি দেখেন ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী

ইন্টারনেটে নীল ছবি দেখেন ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী

দখিনের সময় ডেস্ক:
‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব: কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’- এ বিষয়ে একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। তাতে দেখা যায়, পড়াশোনার সময় ইন্টারনেটে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আসক্তি তৈরি হয়, পর্নোগ্রাফি দেখেন ৩৩ শতাংশ। আর ইন্টারনেট ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার তথ্য তুলে ধরে তা থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য: জরিপে মোট ১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নয়। তাদের মধ্যে ৪৯.৫ শতাংশ নারী, ৪৯.৭ শতাংশ পুরুষ এবং ০.৮ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যগ। এরমধ্যে ১৬ থেকে ১৯ বছরের শিক্ষার্থী ১৩.২ শতাংশ, ২০ থেকে ২৫ বছরের শিক্ষার্থী ৭৬.৩ শতাংশ এবং ২৬ থেকে ৩০ বছরের শিক্ষার্থী রয়েছেন ১০.৫ শতাংশ।
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৮.৬ শতাংশ কলেজ পড়ুয়া, ৬৪.৩ শতাংশ স্নাতক পর্যায়ের, ৮.৪ শতাংশ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এবং ৮.৭ শতাংশ চাকরি প্রত্যাশী। মানসিক সমস্যায় ইন্টারনেটের দায়: জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ জানিয়েছেন তারা জীবনে কখনো না কখনো মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মাঝে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। আর ইন্টারনেটকে ‘পুরোপুরি দায়ী’ মনে করেন ২৬.১ শতাংশ এবং ‘মোটামুটি দায়ী’ ভাবেন ৫৯.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে ইন্টারনেটকে মাত্র ৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী দায়ী করনেনি। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের দায় আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলে।
বাড়ছে অপরিমিত ব্যবহারও: অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকেন ৬.২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৯.৫ শতাংশ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকেন ৩৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৩২.৩ শতাংশ ব্যবহার করেন ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো।
লেখাপড়ায় মনোযোগ কমছে: শিক্ষার প্রয়োজনে বিশেষত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এখন অপরিহার্য। সময়ের তাগিদে তা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, লেখাপড়ার কাজে ৯৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু তার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করলে ৫২.৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। এছাড়াও ২৫.২ শতাংশের পড়া মনে রাখতে অসুবিধা হয়, ৫৭ শতাংশ মনে করেন অযথা সময় নষ্ট হয়, ৩১.২ শতাংশের পড়াশুনায় অনীহা জন্ম নেয়।
আসক্তির কারণে হুমকিতে লেখাপড়া: জরিপে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন। এর মধ্যে ‘খুব বেশি আসক্ত’ ২২.৪ শতাংশ, ‘মোটামুটি আসক্ত’ ৪৭.৭ শতাংশ এবং ‘অল্প আসক্ত’ ২০.৯ শতাংশ। লেখাপড়ায় এই আসক্তি কতটুকু প্রভাব ফেলে তা নিয়ে ৮০.১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, লেখাপড়ার সময় প্রচণ্ড আসক্তি তৈরি হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তাদেরকে লেখাপড়ার মনোযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
পারিবারিক সম্পর্কে ঘাটতি: পরিবার, বন্ধু ও সামাজিকভাবে সুসম্পর্ক রাখতে ইন্টারনেটের অবদান অনস্বীকার্য। দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ইন্টারনেটের যেমন অবদান রয়েছে, ঠিক একইভাবে মন খুলে কথা বলার জন্য কতটুকু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যায় জরিপে উঠে আসা তথ্যে। ৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান তারা ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করেন না। ১৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান যে তারা ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করেন না। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেন বলে জানিয়েছেন ৪৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে আড্ডা না দেওয়া শিক্ষার্থী এবং পরিবারের মাঝে এক ধরনের দূরত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
ঘুম ও শারীরিক সমস্যাও ভোগাচ্ছে: ইন্টারনেট আমাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও কখনো কখনো অতিরিক্ত সময় ধরে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। ৫৮.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জরিপের মাধ্যমে জানান যে, তাদের প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। এর মধ্যে ৩০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিমিত ঘুম না হওয়ার পেছনে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছেন। দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে শিক্ষার্থীরা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন বলে জানান। যার মধ্যে ৫৩.৬ শতাংশের ঘুমের অপূর্ণতা দেখা দেয়, ৩৪.৫ শতাংশের মাথা ঝিম ঝিম ও ব্যথা অনুভূত হয়, ১৯.২ শতাংশের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ২৪.৩ শতাংশ চোখে ঝাপসা দেখে এবং ২৭.৮ শতাংশ ক্লান্তি অনুভব করেন।
পর্নোগ্রাফিতেও আসক্তি তরুণদের: ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা, যৌন উত্তেজক গল্প শোনা কিংবা পড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক অন্যতম আকর্ষণ। সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ৩২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন। এদের মধ্যে পর্নো দেখা বা যৌন উত্তেজক গল্পের ভিডিও কিংবা অডিও শোনা, দেখা কিংবা পড়ার ফলে পরবর্তীতে ৩৫.১ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় বিভিন্ন সময় এই বিষয়ক চিন্তা আসে বলে জানান। ১৩.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী সবসময় এই ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ অনুভব করেন, ২৫.৫ শতাংশের মনে নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন, ১৫.৩ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন, ১০.৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করেন।
এছাড়াও, নিজেকে জানা ও মানসিক বিকাশে সহায়ক আর্ট থেরাপি, ক্লে থেরাপি, স্টোরি টেলিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা; খেলাধুলা ও ব্যায়ামাগারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা; সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সোশ্যাল স্কিল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা; পরিবার পর্যায়ে যৌন বিষয়ক সঠিক পাঠ নিশ্চিত করা; সাইবার ক্রাইম বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বাংলাদেশের চিন্ময় গ্রেফতারে ভারতের বিজেপি নেতার ‍উষ্মা, সীমান্ত অবরোধের ডাক

দখিনের সময় ডেস্ক: গুরুতর অভিযোএগ গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশের ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী। ‍এ ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার...

আওয়ামী ভুতে আক্রান্ত ওসি!

দখিনের সময় ডেস্ক: স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে পুলিশের বাড়াবাড়ি চরমে পৌছেছিলো। এদের অনেকের কথাবার্তায় লাগাম ছিলো না। ‍এরা ছিলো আওয়ামী ভুতে আক্রান্ত। ৫ আগস্ট আওয়ামী...

মন খারাপের কথা শোনে ‘মাইন্ডি’

দখিনের সময় ডেস্ক: ‘মাইন্ডি’ নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত হলেও, হাজারো তরুণের জন্য হতে পারে আশার আলো। তারা শুধু তরুণদের নিয়েই যে কাজ করেন এমনটি নয়।...

চিয়া সিড কি পেটের মেদ কমাতে পারে?

দখিনের সময় ডেস্ক: চিয়া সিড সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে যারা পেটের মেদ ঝরাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের জন্য এটি বেশ উপকারী হিসেবে...

Recent Comments