দখিনের সময় ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আর্জেস গ্রেনেড যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সেটা ব্যবহার হলো আওয়ামী লীগের ওপর। সেটা ব্যবহার হলো যখন আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি। একটা-দুইটা না, ১৩টা গ্রেনেড। আর কত যে তাদের হাতে ছিল কে জানে! সেদিন বেঁচে গেলাম সেটাই অবাক বিস্ময়। আজ (সোমবার) সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভীষিকাময় সেই দিনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি কেবল বক্তব্য শেষ করেছি, নিচে নামব, তখন ফটোগ্রাফার গোর্কি আমাকে বলল- আপা একটু দাঁড়ান, আমি ছবি নিতে পারিনি। সাথে সাথে অন্য ফটোগ্রাফাররা বলল, আপা একটু দাঁড়ান, কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল গ্রেনেড হামলা। হানিফ ভাই আমার পাশে ছিলেন, সাথে সাথে তিনি টেনে বসিয়ে দিলেন। আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলেন নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, যেসব গ্রেনেড ছোড়া হলো সেগুলো ট্রাকের ওপরে না পড়ে ট্রাকের ডালার সাথে বাড়ি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায়। তার সমস্ত গা বেয়ে রক্ত ঝরছে … সেই রক্ত আমার কাপড়ে এসে পড়ছে। প্রথমে তিনটা, তারপর একটু বিরতি দিয়ে আবার একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করল। আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত, আইভি রহমান মহিলাদের নিয়ে নিচেই ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরেক কর্মী সেন্টুসহ ২২ জন মৃত্যুবরণ করেন। হাজারের কাছাকাছি নেতাকর্মী আহত হয়। ৫০০ জনের ওপরে অত্যন্ত মারাত্মকভাবে আহত ছিল। সরকারপ্রধান বলেন, সেখানে কেউ উদ্ধার করতে আসতে পারেনি। যারা উদ্ধার করতে এসেছিল, তাদের ওপর টিয়ারগ্যাস এবং লাঠিচার্জ করা হয়। এখানেই প্রশ্ন, কেন টিয়ার গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে? আমি যখন গাড়িতে উঠছি তখন গুলির আওয়াজ, মাহবুব সেখানেই গুলিতে মারা যায়। গুলি আমার গাড়ির কাঁচে লাগে। শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আমাদের নেতাকর্মীরা যখন ছুটে আসে তখন পুলিশ উল্টো লাঠিচার্জ করে। তাদের ওপর হামলা শুরু করল, টিয়ার গ্যাস মারা শুরু করল।
পুলিশের সেদিনের ভূমিকা সন্দেহজনক ছিল উল্লেখ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আলামত রক্ষা করা হয়নি। তখনকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা লোক পাঠিয়ে সমস্ত আলামত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে চান। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে বললাম- তোমাদের এখনই যেতে হবে, ওই জায়গাগুলো চিহ্ন দিয়ে রাখতে হবে, আলামতগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দুটি গ্রেনেড ফাটেনি। একজন সেনা অফিসার বলেছিলেন- গ্রেনেডগুলো নষ্ট করা যাবে না, আলামত হিসেবে থাকবে। সে সেনা অফিসারের চাকরি চলে গিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা-তারেক যে জড়িত এতে কোনো সন্দেহ নেই, তদন্তেও সেটা বেরিয়েছে। তারা জড়িত ছিল বলেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বাধা দেয়। বিএনপি শুধু হত্যা আর ক্যুর রাজনীতিটাই জানে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি খুনের রাজনীতি করে, এটা তো প্রকাশ্য দিবালোকের মতো মানুষের কাছে স্পষ্ট। ১৫ আগস্ট-এর হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত থাকায় মোশতাক তাকে সেনাপ্রধান বানিয়ে পুরস্কৃত করে। আমেরিকায় এফবিআই কর্মীকে ভাড়া করে জয়কে কিডন্যাপ করে হত্যার চেষ্টা করেছে বিএনপি। বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলের উত্থানই হত্যা ও ষড়যন্ত্র দিয়ে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে আমাদের কর্মীদের হত্যা করা হয়। আর আমরা ক্ষমতায় আসার পর অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? আমরা কেন বিচার থেকে বঞ্চিত ছিলাম? কাদের শেখানো বুলি মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলে? আমরা তো বিচার পাইনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকার নিশ্চিত করেছে। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ২১ আগস্টের হত্যার বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হওয়া উচিত। মূল হোতা তো বাইরে (তারেক রহমান)। মুচলেকা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসে না কেন? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেটি ব্যবহার করে বড় বড় কথা বলছে…. সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুক।