Home অন্যান্য অপরাধ ও দূর্নীতি সুদ দিতে দিতে সংসার চলে না প্রতিবন্ধী সোহাগের

সুদ দিতে দিতে সংসার চলে না প্রতিবন্ধী সোহাগের

দখিনের সময় ডেক্স:

জন্মগতভাবে স্বাভাবিক পা নেই। ছোট আকৃতির দুটি পা রয়েছে কোমরের কাছাকাছি। তার ওপর দুটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার আঘাত শারীরিক বৈকল্যতে পর্যবসিত করেছে। তবু কোনো কিছুই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রতিবন্ধী সোহাগ হাওলাদারকে। প্রতিবন্ধী হলেও জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজেই কাজ করে আসছেন তিনি।

বরিশাল নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড জিয়া সড়কের প্রথম গলির আব্দুল আজিজের ভাড়াটে সোহাগ দুই মেয়ের বাবা। বড় মেয়ে সামিয়া ইসলাম নথুল্লাবাদ ক্যাডেট মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে সাদিয়া ইসলামের বয়স মাত্র দুই বছর।

হাঁটতে যেখানে কষ্ট হয়, সেখানে মোটরচালিত রিকশায় ঘুরান জীবনের চাকা। করোনাকালীন অনেকটা অনাহারেই থাকতে হচ্ছে চার সদস্যের এই পরিবারকে। দ্বিতীয় দফার কঠোর লকডাউনে যখন রিকশা নিয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারতেন না, তখন দুর্দশার অন্ত থাকত না। বর্তমানে লকডাউন শিথিল হলেও যাত্রী কমে যাওয়ায় ‘টানাহেঁচড়া’ করে চলছে সংসার। তার ওপরে মহাজনের গাড়িভাড়া, কিস্তি, ঘরভাড়া আর দিনের বাজার; সবকিছুই দুর্ঘটনায় ভেঙে যাওয়া ঘাড়ে বয়ে টানছেন।

সোহাগের মূল বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। তবে সপরিবার তারা বরিশালেই থাকতেন। সোহাগের শৈশবে তার বাবা শহীদ হাওলাদর দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। তিনি বর্তমানে বরিশাল লাগোয়া জনপদ দপদপিয়া এলাকায় দ্বিতীয় পক্ষ নিয়ে থাকেন। বিপরীতে প্রতিবন্ধী সোহাগকে নিয়ে তার মা সংগ্রাম চালাতে থাকেন বরিশাল নগরীতে। তিনি জানান, দুটি হাত দিয়ে পুরো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আর ছোট পা দিয়ে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে রিকশার ব্রেক কষেন। রিকশাটিও নিজের না উল্লেখ করে বলেন, আমার যখন আয়-রোজগার সম্পূর্ণ বন্ধ, তখন এই এলাকার সবুজ ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি মোটরচালিত রিকশা কিনে দেন। তবে রিকশার টাকা বাবদ দিনে ৩০০ করে জমা দিতে হয়।

সোহাগ জানান, আজ সকালে ১৮০ টাকা রোজগার করেছি। বিকেলে হয়তো ২০০ থেকে ৩০০ হতে পারে। যা আয় হয়, সেটা দিয়েই দিনের বাজার করি। সোহাগের স্ত্রী লুৎফা বেগম বলেন, ১৩ বছর আগে প্রতিবন্ধী সোহাগের সঙ্গে ঘর বাঁধেন পরিবারের অমতে। লুৎফা বলেন, আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল দুই বছর। তারপর যখন বিয়ে করি, তখন দুই পরিবারের কেউই মেনে নেয়নি। দুজনে শেষে শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসা নিয়ে থেকেছি। তারপর পরিবার মেনে নিয়েছে।

কেন সোহাগের মতো চলাচলে অক্ষম একজন মানুষকে ভালোবেসেছেন, উত্তরে তিনি বলেন, ভালোবাসা তো এসব দেখে হয় না। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, এখনো করছি। আজ তার ঘরে চাল নেই। সকালে যা পেয়েছে, সেই টাকায় এক কেজি চাল, ২৫০ গ্রাম বরবটি আর আধা কেজি গুঁড়া মাছ এনেছেন। এই দিয়েই দিন কেটে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়োগ দিচ্ছে আগোরা

দখিনের সময় ডেস্ক: সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আগোরা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি আউটলেট ইনচার্জ পদে একাধিক জনবল নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকেই...

ফোনে বিরক্তিকর নোটিফিকেশন বন্ধ করবে গুগল ক্রোম

দখিনের সময় ডেস্ক: স্মার্টফোনে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় হঠাৎ নোটিফিকেশন বা বার্তা এলে মনোযোগে সমস্যা হয়। ঘন ঘন নোটিফিকেশন আসতে থাকলে অনেকে বিরক্তও হন। তবে গুগল...

যে ৫ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে

দখিনের সময় ডেস্ক: অন্যদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সবার আগে কথা বলতে জানা প্রয়োজন। তবে সুন্দর করে কথা বলাই শেষ কথা নয়, সেইসঙ্গে...

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে সরকারি বাসভবন...

Recent Comments