Home মতামত জেলারের যৌন বাসনা এবং সংসদে স্বরাষ্টমন্ত্রীর পরিসংখ্যান

জেলারের যৌন বাসনা এবং সংসদে স্বরাষ্টমন্ত্রীর পরিসংখ্যান

জলে শিলা ভাসে এবং বাদরে গান গায়- চারদিকে এ ধরনের অবিশ্বাস্য কথা কেবল নয়, সময়ের দাবীকে উপেক্ষা করে অন্য কথাও বলা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর মহান সংসদে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথাই ধরা যাক। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি জানিয়েছেন, ‘দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে।’ তার দেয়া তথ্য মতে কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ২০৩ জন।
এই পরিসংখ্যানেই শেষ নয়, কোন কারাগারে কত বন্দী আছে সে তথ্যও মহান জাতীয় সংসদে দিয়েছেন মাননীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে সংসদ জেনেছে, ঝালকাঠি জেলা কারাগারে সর্বনিম্ন ১৮৯ জন বন্দী রয়েছে। এখানেই হচ্ছে দেশবাসীর প্রশ্ন। যার উত্তর দেবার কেউ আছে বলে মনে হয়না। তা হচ্ছে, করাগারের রক্ষক সর্বগ্রাসী ভক্ষক হয়ে ওঠার ভয়ংকর বিষয়ের প্রতিকার কী? এই ধারা দেশের সকল কারাগারেই কমবেশি চলে বলে অভিযোগ আছে। এটি ওপেন সিক্রেট। এর মধ্যে মাঝেমধ্যে ছিটেফোটা প্রকাশ পায়। যেমন কারাবন্দির আসামীর স্ত্রীর সঙ্গে ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখের যৌন বাসনায় উত্যাক্ত করা এবং ভয়ভিতি দেখানোর খবর। কারা-মহাপরিদর্শক ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের বরাবরে কারাবন্দি রশিদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ আগষ্ট থেকে কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
আইনের চক্করে পড়ে পুলিশের হাত হয়ে আইন-আদালত পেরিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে কারাবাসী হওয়া অথবা কারাগার থেকে আদালতে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা মানুষগুলোকে অনবরত নিংড়ানো হয়। বলাবাহুল্য, কারাগারে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে আসার আগেই কিন্তু মোটামুটি ছোবড়ার বানানে হয়। সেই ছোবড়া থেকে রস বের করে আনে আর একদল মানুষ। এ ক্ষেত্রে কোন কোন কারাগার হয়ে হয়ে ওঠে হায়নার খাঁচার মতো। যা কোন আয়নায়ই ধরা পড়ে না। কিন্তু সবাই জানে। যদিও এই জানা তেমন কোন কাজে আসে না। তবে এ বিষয়ে কার্যকর জানার কিছুটা ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিলো ৩ সেপ্টেম্বর মহান সংসদে। কিন্তু এই সুযোগও কোন কাজে আসলো না। অই যে বলে না, অভাগা যেদিকে চায় সাগরও শুকায়!
উল্লেখ্য, কারা-কর্তপক্ষের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৈরী করেদেয়া বক্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংসদে কষ্ট করে উচ্চারণ করতে হয়নি। কারণ এই প্রশ্ন-উত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়েছে। মানে তা আর কষ্ট করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে পাঠ করতে হয় না। আর কোন কোন সম্পুরক প্রশ্ন করারও সুযোগ থাকে না। না হলে হয়তো ঝালকাঠি জেলা কারাগারের জেলার মো. আক্তার হোসেন শেখের বিষয়টি সংসদে আলোচিত হতে পারতো। কিন্তু প্রশ্ন-উত্তর টেবিলে উত্থাপিত হবার কারণে তা আর হয়নি। এরপরও পয়েন্ট অর্ডারে যেকোন মাননীয় সংসদ সদস্য এই প্রসঙ্গ তুলতে পারতেন। কিন্তু এমনটি ঘটেনি। এভাবেই কারাগারে অভ্যন্তরে কান্না এবং বাইরে থাকা স্বজনদের বিভিন্নভাবে নি:স্ব হবার বিষয়টি অনেকটাই যেনো বহতা নদীর প্রবল স্রোত। যদিও অনেক নদী এখন আর বহমান নেই। অথচ নদী রক্ষায় কত ব্যবস্থাপনাই তো আছে। এমনকি আছে বাহারী নামের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও। যদিও এই কমিশন ঠুটোজগন্নাথ। কোন কাজ নেই। এমন কি আগিলাকালের কেরাণীদের মতো মাছিও মারে না। কারণ মশার দাপটে মাছিরা তুচ্ছ হয়ে গেছে। যেমন নদী-জলাশয় খেকোদের দাপটে অন্যেরা যেমন ‘ম্যাও!’
একই তরিকায় কারা ব্যবস্থাপনা কার্যকর নাকি কেবলই কাগজী বিধান তাও বিবেচেনার দাবী রাখে। যদিও দেশে কারাগার কেন্দ্রিক বিশাল এক লটবহর আছে। আর এ সবই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। এখানেই শেষ নয়। জেলায় ডিসিদের যে বিশাল এখতিয়ার তার মধ্যে একটি হচ্ছ কারাগার। এ ব্যাপারে কমিটিও আছে। ডিসিরা পাইক-পেয়াদা-বর্কনদাজ নিয়ে নিজনিজ জেলার কারাগার ঘটাকরে পরিদর্শনও করে থাকেন। সবমিলিয়ে ভাবখানা এই, পান থেকে চুন খসার উপায় নেই! কিন্তু বাস্তবে কারা ব্যবস্থাপনায় প্রায় সবকিছুই খসেপড়ে। নক্ষত্র খসে পড়ার দৃষ্টান্তও আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ধারাবহিকতায় ৩ নভেম্বর কারাগারের ঘটনা কারোরই অজানা নয়। কারাগারে গুলি করে এবং বেওনেট দিয়ে কুপিয়ে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নভেম্বর মাস এলে এ নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু এ কথামালা সীমাবদ্ধ থাকে কেবল ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ড প্রসঙ্গে। কিন্তু সেই কারাগারের ব্যবস্থাপনা কতটা কি এগিয়েছে, কি পিছিয়ে তা নিয়ে মোটেই কথা হয় না। সরকারী ভাষ্যতো আকাশকুশুম! জনতার সীমানার বাইরে। একাকি শুধু গাইতে পারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, “কেটেছে একেলা বিরহের বেলা/ আকাশকুসুম চয়নে।”
লেখন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
কব্দ: ৪৩০
দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ১০ সেপ্টেম্বও ২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

Recent Comments