দেশের নিত্যপণ্যের বাজার যেন সাগরের ঢেউ। একের পর এক, বিরামহীন। লাগাতার নিরন্তর প্রক্রিয়া। পণ্যমূল্য সাগরের বিরামহীন ঢেউয়ের মতো আঘাত হানে। এ যেন থামার নয়। এ ধারায় এখন চলছে আলুপর্ব। আর আলুর এ দোষ কাটাতে সংশ্লিষ্টরা ছোটাছুটি করছেন এদিক-ওদিক। এডাল-ওডালে দুরন্ত বাঁদরের মতো। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ে গজেন্দ্র চালে চলা সরকার আলু-ডিম-পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। সবকিছু ছাড়িয়ে দেশে প্রধান আলোচ্য প্রসঙ্গ, আলুর দোষ।
এমনকি আসন্ন নির্বাচনে প্রতীক হিসেবেও আলুকে বিবেচনায় নেওয়ার দাবি রাখে বলেও অনেকেই মনে করেন। আবার কারও কারও মতে, আগামী নির্বাচন নিয়েও আলুকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আর এমনটা হলে রাজনীতিকদের বহু সাধের পিঠা চলে যেতে পারে মগডালে বসে থাকা বানরের হাতে! ইতিহাস বলে, আলুর আদি জন্মভূমি লাতিন আমেরিকার আন্দেজ পার্বত্যাঞ্চল। খ্রিষ্টজন্মের পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি আগে আলুর চাষাবাদ শুরু হয়। পৃথিবীর বেশকটি দেশের প্রধান খাবার আলু। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের যে ‘গ্রেট আইরিশ ফ্যামিন’, সেই দুর্ভিক্ষের কারণ ছিল ছত্রাক-আক্রান্ত হয়ে আলুর ফলন নষ্ট হওয়া। অষ্টাদশ শতকের বাভারিয়ার ক্ষমতা দখলের যে যুদ্ধ, তা ‘পটেটো ওয়ার’ হিসেবেই খ্যাত। আলু নিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মের একটি হচ্ছে ‘দ্য পটেটো ইটার্স। ভ্যান গগের আঁকা এ ছবিতে একটি পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসে আলু খেতে দেখা যাচ্ছে। ইউরোপে আলু নিয়ে গান আছে। একটি-দুটি নয়, অনেক গান। আলু তাদের সংস্কৃতিতে আত্মীকৃত।
শেরিল হুইলারের গানটি রীতিমতো বিখ্যাত, ‘পটেটো পটেটো পটেটো (৪-বার)/দে আর রেড, দে আর হোয়াইট, দে আর ব্রাউন/দে গেট দ্যাট ওয়ে আন্ডার গ্রাউন্ড/দেয়ার ক্যানট বি মাচ টু ডু/সো নাউ দে হ্যাভ ব্লু ওয়ানস টুও।’ আরও গান আছে, আছে ছড়াগান। ছড়ার ছড়াছড়ি। মজাদার কৌতুক আছে। এদিকে আলু নিয়ে বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় একটি পঙক্তি হচ্ছে—‘পা পিছলে আলুর দম।’ তবে কোনো আলুগীতি বা আলুসংগীত নেই। এদিকে বাংলাদেশে শুধু ‘আলুর দোষ’ বলে একটি কথা বেশ প্রচলিত। যার রূপান্তরিত চাপে সংশ্লিষ্টরা এখন গলদঘর্ম।
# দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩