Home লাইফস্টাইল নার্ভাস ব্রেকডাউন কী? জেনে নিন এর লক্ষণ

নার্ভাস ব্রেকডাউন কী? জেনে নিন এর লক্ষণ

দখিনের সময় ডেস্ক:
বর্তমান দ্রুতগতির বিশ্বে, স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা অনেকটাই পরিচিত হয়ে উঠেছে। নার্ভাস ব্রেকডাউন কী এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেরই অজানা। স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কখনও কখনও বাড়তে পারে যাকে সাধারণত ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুসারে, গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সম্মুখীন ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকালমৃত্যুর সম্মুখীন হয়। এটি এমন এক সমস্যা যা যে কাউকে প্রভাবিত করতে পারে।
আমরা অনেক সময়ই সঠিক লক্ষণ না জানার কারণে অনেক রোগের চিকিৎসা করতে দেরি হয়ে যায়। শারীরিক সমস্যার দিকে গুরুত্ব দিলেও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আমাদের খুব বেশি খেয়াল থাকে না। এক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগই থাকি উদাসীন। তবে বাস্তবতা হলো শারীরিক যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও প্রতিরোধ করতে হবে। নয়তো ভুক্তভোগী হতে হবে আপনাকেই।
নার্ভাস ব্রেকডাউন কী?
নার্ভাস ব্রেকডাউনের লক্ষণ, অন্তর্নিহিত কারণ এবং প্রয়োজনীয় প্রতিকারগুলো জানা থাকা জরুরি। সেজন্য সবার আগে নার্ভাস ব্রেকডাউন কী তা জানা জরুরি। এটি জানা থাকলে বাকি পদক্ষেপগুলো সহজ হয়ে যায়। ফলে নিজের বা প্রিয়জনের প্রয়োজনে যথাসাধ্য সাহায্য করা সম্ভব হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক নার্ভাস ব্রেকডাউন সম্পর্কে-
নার্ভাস ব্রেকডাউন: অক্সফোর্ডে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, এটি একটি গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সংকট যা স্ট্রেস, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার মতো চিহ্ন প্রকাশ করে। নার্ভাস ব্রেকডাউনের সময় যে কারও জন্য তার প্রতিদিনের কাজগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা কঠিন হয়ে ওঠে। এই ধরনের ক্ষেত্রে জরুরি বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে হবে। নার্ভাস ব্রেকডাউন বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পেতে পারে, এর কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে-
চরম ক্লান্তি: নার্ভাস ব্রেকডাউনের সময় ক্লান্তি স্বাভাবিক ক্লান্তিকে ছাড়িয়ে যায়। এটি শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তির অনুভূতি দেয়। যারা এই উপসর্গটি অনুভব করেন তাদের সাধারণ কাজও করতে ভীষণ কষ্ট হয়। যেমন বিছানা থেকে নামা বা গোসল করা। এই ক্লান্তি এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয় যে এটি দৈনন্দিন কাজ করা বা নিয়মিত ঘুমের ধরন বজায় রাখাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায়।
তীব্র উদ্বেগ: উদ্বেগ নার্ভাস ব্রেকডাউনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর ফলে ভয়, অস্বস্তি এবং আশঙ্কার তীব্র এবং অবিরাম অনুভূতি অনুভব হয়। উদ্বেগ ছাড়াও অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে ওঠে। দেখা দিতে পারে কিছু শারীরিক উপসর্গ। যেমন বুক ধড়ফড় করা, ঘাম, শরীর কাঁপা, শরীর অবস লাগা ইত্যাদি। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হোন।
বিষণ্ণতা: নার্ভাস ব্রেকডাউনের সময় বিষাদ এবং হতাশার অনুভূতি দেখা দেয়। তখন নিজের পছন্দের কাজগুলোও আর করতে ইচ্ছা করে না। কোনোকিছুতে আনন্দ লাগে না এবং কোনো কাজও করতে ইচ্ছা করে না। এই মানসিক অসাড়তা সামাজিকভাবেও আপনাকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে প্রিয়জনের কাছ থেকে সাহায্য বা সমর্থন চাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
বিরক্তি: নার্ভাস ব্রেকডাউন হলে মেজাজ সারাক্ষণ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি সহজেই উত্তেজিত, খিটখিটে বা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দ্রুত রেগে যেতে পারে। এই মানসিক অস্থিরতা সম্পর্ক নষ্ট করে দিতে পারে। সেইসঙ্গে স্ট্রেস এবং উদ্বেগও বাড়িয়ে দিতে পারে।
একা থাকতে চাওয়া: মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে দূরে সরে আসে। ফলস্বরূপ মানুষ আরও একা হয়ে যায়। বন্ধুবান্ধব এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো মানসিক শক্তি পায় না। এখান থেকে একাকীত্ব এবং হতাশা আরও বাড়তে পারে।
স্নায়বিক সমস্যা: নার্ভাস ব্রেকডাউনের সময় স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেওয়া সাধারণ লক্ষণগুলোর একটি। এসময় যেকোনো কাজে মনোনিবেশ করতে, সিদ্ধান্ত নিতে বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখতে কষ্ট হতে পারে। এই সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তির অসহায়ত্ব এবং হতাশার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নার্ভাস ব্রেকডাউনের কারণ কী?
হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের মতে, নার্ভাস ব্রেকডাউনের বিভিন্ন অন্তর্নিহিত কারণ থাকে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এর মতো অবস্থা ব্যক্তিদের নার্ভাস ব্রেকডাউনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা যেমন বিবাহবিচ্ছেদ, ট্রমা বা আর্থিক সমস্যা প্রধান কারণ হিসাবে কাজ করতে পারে। এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় না থাকলে তা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কাজ, সম্পর্ক বা আর্থিক চাপ পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
নার্ভাস ব্রেকডাউনের চিকিৎসা কী?
নার্ভাস ব্রেকডাউনের সম্মুখীন হলে, অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া অত্যাবশ্যক। মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডাক্তাররা ওষুধ লিখে দিতে পারেন। তবে কখনোই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া একা একা কোনো ওষুধ খাবেন না। মনোবিজ্ঞানী বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা চাপ এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করার জন্য থেরাপি দিতে পারেন। কাউন্সেলিং, ওষুধ বা জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

Recent Comments