দখিনের সময় ডেস্ক:
মোবাইলের একটি এসএমএসকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদকে কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তানজিদ মঞ্জু ও সিহাব নামে দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় কক্ষে ডেকে নিয়ে এ নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন শুক্রবার তাকে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করেন তার সহপাঠীরা।
ভুক্তভোগী মুকুল মেসেঞ্জারে জুনিয়রদের বুঝিয়েছেন যে, ‘১০ম ব্যাচের কতিপয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য ১১ ও ১২তম ব্যাচকে বসান। যেটা সব ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বদনাম হয়। তারা এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন। তাদের ডাকে কারও সাড়া দেওয়া উচিত হবে না।’ এমন অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ৮ম ব্যাচের তানজিদ মঞ্জু এবং সিহাব উদ্দিন তাকে তাদের ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত আটকে রেখে নির্যাতন করেন।
ঘটনায় অভিযুক্ত তানজিদ মঞ্জু ও সিহাব বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। সেই লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ভু্ক্তভোগী নিজেই। ভুক্তভোগী মুকুল আহমেদ বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু হলের ৫০২০ নম্বর কক্ষে থাকি। আমাকে প্রথমে কয়েক বার ফোন দেয় আমার বিভাগের বড় ভাই তানজিদ মঞ্জু। তারপরে ফোন ধরলে তিনি তার ৪০১৮ নম্বর কক্ষে ডেকে নেন। আমার মেসেজগুলো দেখতে চাইলে আমি সেগুলো দেখাই এবং ফোন কেড়ে নেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে শিহাব ভাই মারতে থাকে। পাইপ দিয়ে পিটিয়ে বাম হাত ভেঙে দেয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। আমি তাদের পা জড়িয়ে ধরলেও তারা আরও বেধড়ক মারতে থাকে। পরে তারা বুকে পা দিয়ে বলে তোকে কোন বাপ বাঁচাতে আসবে।
বুয়েটের আবরারের মতো মেরে ফেলতে চাইছিল। আমাকে ডাক্তারের কাছে পর্যন্ত নিয়ে যায়নি। সিসি ক্যামেরা থাকায় সারারাত তারা আমাকে ওই রুমে আটকিয়ে রাখে। সকাল ভোরে আমি পালিয়ে নিজ রুমে আসলে সহপাঠীরা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। যেখানে আমি চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার একটি হাত ভেঙে গেছে। সারারাত হাত ভাঙা যন্ত্রণা নিয়ে ওই কক্ষে আটকে রাখেন তারা। মা-বাবার স্বপ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি। অথচ আজ আমি আবরারের মতো মরতে বসেছিলাম। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিচার চাই যাতে আমার মতো ভু্ক্তভোগী আর কেউ না হয়।
এদিকে অভিযুক্ত তানজিদ মঞ্জুর গণমাধ্যমকে জানান, মুকুল ছেলেটা ছাত্রশিবির করত। তাকে এর আগে বহুবার মানা করা হয়েছে যে, ক্যাম্পাসে এসব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু সে সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম করে ছাত্রশিবিরের প্রচার চালায় বিভাগে। তাই তাকে ধমক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে আমি মারধর করিনি। সে অভিনয় করছে এবং ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।
বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট মো. আরিফ হোসেন জানান, তাকে মারধর করা হয়েছে বিষয়টা শুনেছেন। তিনি তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। দুর্বৃত্ত বা কোনো শিক্ষার্থী কর্তৃক এমন নির্যাতনের শিকার যাতে না হয়, সে বিষয়েও কঠোর হস্তে দমন করার কথা জানান তিনি।
ভুক্তভোগীর ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান তানভীর কায়ছার মেডিকেলে তাকে দেখতে যান ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার কথা ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মৌখিকভাবে বিষয়টা শুনেছি এবং তাকে দেখতে মেডিকেলে এসেছি। লিখিত অভিযোগ পেলেই দ্রুততম তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।