Home শীর্ষ খবর বিদেশ থেকে ড্রেজার এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু

বিদেশ থেকে ড্রেজার এনেছিলেন বঙ্গবন্ধু

স্মরণ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধু নদী খননের জন্য বিদেশ থেকে আটটি ড্রেজার এনেছিলেন। জানা যায়, নদী খননে ড্রেজার তাঁর বিবেচনায় আসে কিশোর বয়সে মাঠে ফুটবল খেলার সময় পাশের নদীতে ড্রেজার দেখে। নদী ড্রেজিং ও খাল খননের কর্মসূচি পাকিস্তান আমলেও জোরদার ছিল। তখনো খরস্রোতা খালও তিন-চার বছর পরপর খনন করা হতো। আর জিয়াউর রহমান তো গ্রহণ করেছিলেন সারা দেশে খালকাটা কর্মসূচি।
অনেকের বিবেচনায় জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচি যত ছিল বাস্তবতা, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও এর ওপর গবেষণা করে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বলা হয় তিনি সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার সুনজরে ছিলেন। অবশ্য তাতে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মন্ত্রী এবং অনেক কিছু হতে তার কোনো অসুবিধা হয়নি। খালেদা সরকারের প্রথম আমলের শেষ দিকে কথিত জনতার মঞ্চে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে তার অতীতের সব কালিমা মুছে গেছে। তিনি যেন হয়ে গেছেন দেবশিশু!
এদিকে জিয়াউর রহমানের পরের সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ যেন পুরোই পানিবিমুখ ছিলেন। এর প্রমাণ তিনি ‘বরিশাল ইরিগেশন প্রজেক্টে’ও রেখেছেন। প্রকল্পের ডাবল লিফটিং ব্যবস্থায় প্রথম দফায় নদী থেকে পানি তোলার খরচ বহন করত সরকার এবং জমিতে সেচ দেওয়ার খরচ মেটাত কৃষক। কিন্তু একপর্যায়ে প্রথম লিফটিংয়ের খরচ এরশাদ সরকার বন্ধ করে দিল। এ অবস্থায় পুরো সেচব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। কারণ ডাবল খরচ বহনের ক্ষমতা কৃষকদের ছিল না।
মনে রাখা প্রয়োজন, যোগাযোগে উন্নয়নের নামে যেসব ডিজাইন এবং ভৌগোলিক ও পরিবেশগত বাস্তবতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কালভার্ট-সেতু-রাস্তা নির্মিত হয়ে আসছে তা কিন্তু আখেরে বাংলাদেশকে পানিশূন্য করে চরম বিপর্যয়ে নিমজ্জিত করতে পারে। তখন চাইলেও আর হয়তো পানি সংকট থেকে দেশকে তোলা যাবে না। নিমজ্জিত টাইটানিক জাহাজ কি তোলা গেছে? আর পানি সংকট হলে খাদ্য নিরাপত্তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, মিষ্টি পানির ৭০ শতাংশই ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজে। ফলে পানির সংকট আরও তীব্র হতে থাকলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!
এ প্রসঙ্গে ১৬ অক্টোবর পালিত বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্যে বিশেষ দোতনা রয়েছে। যাতে বলা হয়েছে- ‘পানি জীবন, পানিই খাদ্য। কেউ থাকবে না পিছিয়ে’। কিন্তু পানি প্রশ্নে যারা পিছিয়ে থাকবে তাদের যে কোনো মাত্রায় দুর্দশা হবে তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন খাদ্যের জন্য হাহাকার করা ছাড়া হয়তো আর কিছু করার থাকবে না। আর পানি না থাকলে গর্বের পদ্মা সেতু পরিণত হতে পারে ঊষর বালুচরে বিশাল ওভার ব্রিজে।
সঙ্গে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাওয়ার ফলশ্রুতিতে ‘ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশাল’ হয়ে গেছে কেবলই অতীত স্মৃতি, সেই বাস্তবতা এখন পরিণত হয়েছে অলীক প্রবচনে! স্লুইস গেটের কারণে খালগুলো যে দশায় পৌঁছে তাতে বিরাজমান অকেজো স্লুইস গেটগুলো কার্যকর করা ছাড়া আপতত আর কোনো উপায় আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না। আর দীর্ঘমেয়াদে এগুলো অপসারণ করে খাল খনন করতেই হবে। জোর দিতে হবে নদী খননের ওপরও। এ বিষয়টি ১৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমাদের নদী-নালাগুলো মানুষের জীবনের মতো, এগুলোর প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। মানুষের হার্ট বন্ধ হলে যেমন মরে যায়, নদী-নালার প্রবাহ বন্ধ হলে দেশটাই মরে যায়।’ প্রশ্ন হচ্ছে, নদী-খাল-জলাধার কি কাক্সিক্ষত মাত্রায় বেঁচে আছে? এ প্রসঙ্গে কবিতার একটি পঙক্তি উদ্ধৃত করা যায়- ‘একে কি বেঁচে থাকা বলে!’
আলম রায়হান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক (বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ১৯ অক্টোবর ২০২৩))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বাউফলে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চোখের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্মাণকাজে নিম্মমানের উপকরণ ব্যবহার করায় ক্ষুদ্ব প্রতিক্রিয়া...

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

Recent Comments