Home শীর্ষ খবর বদলী বানিজ্যে বেহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, আদেশ মানে না নির্বাহী প্রকৌশলীরা

বদলী বানিজ্যে বেহাল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, আদেশ মানে না নির্বাহী প্রকৌশলীরা

আলম রায়হান ও সুকেসেনী মালাকার:

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তিন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বদলীর আদেশ না মানার অভিযোগ উঠেছে। এই নির্বাহী প্রকৌশলীরা হচ্ছেন খুলনার মোঃ আকমল হোসেন, চুয়াডাঙ্গার শেখ ফরিদ ও ঝিনাইদহের আমিনূল ইসলাম।  উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক আদেশে ১০ কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন উল্লেখিত তিন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৭ জন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং তিনজন সহকারী প্রকৌশলী।
সূত্র মতে, অধিদপ্তরের প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর উল্লেখিত বদলী আদেশ জারি করা হয়। এরপরও এই বদলী আদেশ না মানার কারণ হিসেবে অনেকেই অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনের বদলী বানিজ্যকে দায়ী করছেন। এর সঙ্গে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামানুর রহমানের কারসাজী রয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। উল্লেখ্য, দুর্নীতির দায়ে তিনি প্রায় দুই বছর সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন।
বদলী আদেশ অনুসারে বদলীকৃত কর্মকতাদের নিজনিজ কর্মস্থলের দায়িত্ব হস্তান্তর করে নতুন বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আজ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) অপরাহ্নে স্ব স্ব কর্মস্থল থেকে তাৎখনিক অবমুক্ত হবেন। প্রচলিতভাবে যা ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ হিসেবে পরিচিত। এই আদেশ ৭ জন মানলেও মানেননি উল্লেখিত তিন নির্বাহী প্রকৌশলী।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামানূর রহমান

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আকমল হোসেনের সঙ্গে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামালুর রহমানের স্বার্থ ও ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদিকে মোঃ আকমল হোসেনের বিরুদ্ধে খুলনায় বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রধান কার্যালয় ও জোনাল কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অনেক কিছু করেছেন। তিনি নাকি অনেক ক্ষেত্রে প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনকেও পাত্তা দেন না। এই স্বেচ্ছাচারিতার সুবিধার জন্য মোঃ আকমল হোসেন খুলনায় কতিপয় ঠিকাদার ও স্থানীয় বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে শক্তিশালী একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। এই চক্রের উপর ভর করেই বদলী আদেশ ঠেকাবার জন্য মোঃ আকমল হোসেন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মহলে লবিং করেছেন। কিন্তু বদলী আদেশ বাতিল করাতে পারেননি। এরপরও রহস্যজনক কারণে পদ আকড়ে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আকমল হোসেন। বিষয়টি খুলনায় টক অফ দা টাউন হয়েগেছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের দুই নির্বাহী প্রকৌশলী বদলী আদেশ অমান্য করে পদ আকড়ে আছেন। এর নেপথ্যে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামানুর রহমানের ইন্ধন রয়েছে বলে কেউ কেউ বলছেন। এব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার(২৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে দশটার দিকে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে খুলনা জোনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামানুর রহমান ফোন রিসিভ করা থেকে বিরত থাকেন। নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আকমল হোসেন ফোন কেটেদেন। বাকী দুই নির্বাহী প্রকৌশলী মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন

এদিকে অপর একটি সূত্র বলছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন ‘বিদায়ী কালেকশন’ করছেন এবং বেশ ‘কামিয়েছেন’! এ ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন নিজে টাকা নেবার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘খরচা’ হিসেবেও টাকা নিচ্ছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। কারোকারো মতে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভের জন্য দৌড়ঝাপও করছেন। এজন্যও তিনি ফান্ড কালেশন করছেন বলে রটনা আছে। সূত্র মতে, মো. সরোয়ার হোসেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য লবিস্টি হিসেবে কাজ করছেন নারায়নগঞ্জের এক সংসদ সদস্য। ছাত্ররাজনীতি থেকে বেড়েওঠা এই এমপি টেলিভিশন টকশোতে বেশ পরিচিত মুখ।
উল্লেখ্য, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন আগামী ৭ এপ্রিল অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা। সূত্র বলছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (পাবলিক হেল্থ)-এর প্রধান প্রকৌশলী হবার মতো অবস্থায় ছিলেন না মো. সরোয়ার হোসেন। কিন্তু তিনি ওপেনসিক্রেট কারণে এই পদে আসীন হবার সুযোগ পেয়েছেন। তবে সাবেক প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের মতো বিভিন্ন প্রকল্প থেকে টাকা হাতিয়ে নেবার ক্ষেত্রে মো. সরোয়ার হোসেনের বিশেষ ঘার্তি রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি বদলী বানিজ্যের দিনে মনোনিবেশ করেন। এবং বেশ আয় করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজে টাকা নেবার পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের ‘খরচ’ হিসেবেও টাকা নিচ্ছেন। এই ঘটনার মধ্যে তিনি বিদেশ সফর কেন্দ্রিক এক আলোচিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

কে ‍এই এব্রাহিম রাইসি

দখিনের সময় ডেস্ক: ইরানে প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ দৃঢ়চেতা ধর্মীয় নেতা। তিনি দেশটির শীর্ষ বিচারপতি এবং তার মতাদর্শ অতি-রক্ষণশীল।...

ইরানের প্রেসিডেন্টের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো অজানা

দখিনের সময় ডেস্ক: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ হওয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর যদি...

রাজনীতিতে রনো ভাইরা আর নেই

ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক বিশ্বাস ও সম্পৃক্ততার সূত্রে বাম রাজনীতিকদের বিষয়ে বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ লালন করে আসছি। এ ধারায় আশি-একাশি সালে পেশাগত জীবনের সূচনালগ্নে বাম নেতাদের সঙ্গে...

চোরদের জন্য দুঃসংবাদ, জামিনের পরও থাকবে নজরদারিতে

দখিনের সময় ডেস্ক: গ্রেপ্তারকৃত চোরদের যেন জামিন না হয়, সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা ও জামিন পেলেও তাদের গতিবিধি নজরে রাখতে হবে। রাজধানীতে চুরি ঠেকাতে এ...

Recent Comments