Home শীর্ষ খবর প্রেমের ফাঁদে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরীত করার ষড়যন্ত্র চলছে: রাণা দাশগুপ্ত

প্রেমের ফাঁদে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরীত করার ষড়যন্ত্র চলছে: রাণা দাশগুপ্ত

দখিনের সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরীত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে দেশজুড়ে। এ কাজে সফল হতে একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মীদের জন্য রীতিমতো পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে সনাতন সম্প্রদায়ের নারীদের ধর্মান্তরিত করার সব কায়দা কৌশলও এসব স্ট্যাটাসে তুলে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসব অন্যায় কর্মকাণ্ড চললেও কেন প্রতিকার মিলছে না।
রোববার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে এ সাম্প্রদায়িক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সেইসঙ্গে এসব ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদিস নামীয় এক তথাকথিত সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত বেশ কিছুদিন ধরে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে চলেছে। যাতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণে তাদের দলের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব শিবিরদের জন্য নতুন পুরস্কার ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ব্রাহ্মণ মেয়েদের ধর্মান্তরকরণের জন্য তিন লাখ, ভারতীয় বাঙালি মেয়েদের জন্য দুই লাখ, নমশুদ্র মেয়েদের জন্য পঞ্চাশ হাজার আর পুরো পরিবারের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে কথিত ধর্মান্তরকারীদের।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রচারিত আরেক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, মুসলিম ভায়েরা মূর্তি পূজারীদের (হিন্দুদের) প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে আর সে সঙ্গে সাচ্চা মুসলিম জন্ম দিচ্ছে। সবচেয়ে এটাই ভালো লাগছে, আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা এমনভাবে ব্রেনওয়াশ করছে, সে মেয়েরা ভাবছে- তাদের সত্যি ভালোবাসছে। তাদের এ ভাবনা আমাদের মিশন পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে। এ প্রচারপত্র মনোযোগ সহকারে পড়ার কথাও ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লিখিত রয়েছে। আরেকটিতে লাভ জিহাদের এ কথিত মিশনের গ্রুপ লিডার হিসেবে জনৈক মামুনের নাম রয়েছে।
আরেকটি ফেসবুক গ্রুপের স্ট্যাটাসে কীভাবে হিন্দু নারীকে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলা হবে তার একটি নির্দেশনাও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘একটা দুইটা করে ফেক আইডি করবেন হিন্দু নাম দিয়ে। বিভিন্ন হিন্দু ফেসবুক গ্রুপে অ্যাড (যুক্ত) হবেন। অ্যাড হওয়ার পর প্রথম কাজ হচ্ছে সেখান থেকে বেশিরভাগ মেয়েদের ছবিযুক্ত আইডি টার্গেট করবেন এবং হিন্দু মেয়েদের আইডি লিংক আমাদের গ্রুপে প্রেরণ করবেন এবং নিজেরা ফেসবুকে মেসেজ করবেন। আপনারা শুরুতেই মেয়েদের সঙ্গে সমস্ত প্রেমের আলাপ করবেন না। ধীরে ধীরে তাদের মনে প্রবেশ করতে হবে। আগে তাদের মন জয় করতে হবে। বেশি অতিরিক্ত প্রশংসা করতে যাবেন না। তবে মাঝে মধ্যে কথা শেষে হালকা-পাতলা প্রশংসা করবেন এবং প্রতিনিয়ত তার প্রতি যত্নবান দেখাবেন। তার প্রত্যেকটি বিপদে আপনি বেশি উদ্বিগ্ন দেখাবেন এবং কথা শেষে আল্লাহ ভরসা এবং ইনশাআল্লাহ-এ কথাগুলো উচ্চারণ করবেন। তবে তাদের দেব-দেবী নিয়ে প্রথমে কোনো আপত্তি করবেন না, কাউকে খারাপ বলবেন না। তাহলে আপনার প্রতি বিরক্তি চলে আসবে তার মনে। আপনার স্কুলে-কলেজে অনেক হিন্দু বন্ধু আছে। তাদের বিভিন্ন পূজায় আপনার যান। তখন এ অনুষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের কুসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনারা জেনে নেবেন। এভাবে করতে করতে একবার প্রেমে পড়লেই বিভিন্ন বাহানা করে এখানে সেখানে দেখা করার বাহানা করবেন। তবে প্রথম প্রথম তেমন কিছু করবেন না যাতে মেয়েটি বিরক্তবোধ করে। তাকে আপনি এমন মনোভাব দেখাবেন, তাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন। ওনার শরীর আপনার প্রয়োজন নেই। ওনার মনকে আপনি ভালোবাসেন। তাহলে দেখবেন অতি সহজে এবং তাড়াতাড়ি আপনার প্রতি বেশি দুর্বল হবে। আর দুর্বল হওয়ার পর আস্তে আস্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হবেন। আর একবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে আর কোনো টেনশন নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে উদ্ভট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত উসকানিমূলক প্রচারণা, কথিত ধর্মান্তরকরণ মিশন অব্যাহতভাবে চলতে থাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী বিশেষ করে হিন্দু পরিবারগুলো গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ইতোমধ্যে নিপতিত হয়েছে এবং তাদের মেয়েদের জীবনের, শিক্ষার ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় অধিকতর শঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে তাদের কন্যা সন্তানদের স্কুলে-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। এসব প্রচারণা ও উদ্ভট কার্যকলাপ সামাজিক শান্তি ও সম্প্রীতির পথে নিরতিশয় বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। এই কার্যকলাপ বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে এসব ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের এবং যারা এহেন উসকানিমূলক অপতৎপরতায় লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

মাদকের নতুন ডিজি মোস্তাফিজুর, বরিশালের কৃতি সন্তান

দখিনের সময় ডেস্ক: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে তিনি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। মোস্তাফিজুর...

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চাকরি, নেবে ৮৫ জন

দখিনের সময় ডেস্ক: কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি শূন্য পদে ৮৫ জনকে নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ১৬ মে থেকে আবেদন...

চ্যাটজিপিটির নতুন চমক, ব্যবহার করা যাবে বিনামূল্যে

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রযুক্তি বিশ্বে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ওপেনআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এবার প্রযুক্তির দুনিয়ায় আরো একটি আমূল...

ভারতে আইকনিক নিনজা ৪০০’র উৎপাদন কেন বন্ধ করল কাওয়াসাকি

দখিনের সময় ডেস্ক: ভারতে আইকনিক নিনজা ৪০০’র উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে কাওয়াসাকি। বাজারে নিনজা ৫০০ লঞ্চের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আইকনিক নিনজা ৪০০-র যুগের অবসান...

Recent Comments