Home মতামত নজিরবিহীন বেনজীর

নজিরবিহীন বেনজীর

সবাই জানেন, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের আইজি ছিলেন। গুণধর এই ব্যক্তির আগে আইজিপি পদে ছিলেন ২৮ জন। আর আইজিদের মধ্যে মহা-নজিরবিহীন অঘটন ঘটিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। তাঁকে বলা হয়,  ‘নজিরবিহীন বেনজীর!’ হাওয়া ভবনের মাঠে ক্রিকেট খেলার সময় অনেকটা চকিদারের ভূমিকা পালন করা প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে পুরো চাকরি জীবন তিনি নানান ধরনের নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। এ কারণে তিনি অঘটন ঘটন পটিয়সী হিসেবে বেশ খ্যাত।
অবসরে যাওয়ার পরও বেনজীর আহমেমের নজিরবিহীন ধারায় তেমন ছেদ পড়েনি। সিঙ্গাপুরে শপিং মলে শর্টপ্যান্ট-টিশার্ট পরে শপিংসহ নানান বিষয়ের কারণে ফোকাসে ছিলেন বেনজীর আহমেদ। আর এ বিষয়টিকে তুঙ্গে তুলে দেয় তাঁর সম্পদের পাহাড় এবং দায়িত্বে থাকাকালে নানা অনিয়ম নিয়ে কালের কণ্ঠে অনুসন্ধানী রিপোর্ট। এ খবরে সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও শুরুর দিকে ওপর মহলে নড়াচড়ার আলামত তেমন দেখা যায়নি। ভাবখানা এই, ‘আরে দূর, পত্রিকা লিখেছে!’ গণমাধ্যম নিয়ে এই মানসিকতা বেশ জেঁকে বসেছে। তবে পরিস্থিতি এখানেই থেমে থাকেনি। বরং বেশ কিছুটা গতি পেয়েছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়।
এ জন্য অবশ্য সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমনকে ১৮ এপ্রিল দুদকে দৌড়াতে হয়েছে। এর পরই যেন কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙার মতো জেগেছে দুদক। ২২ এপ্রিল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানিয়েছেন, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে। ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান দুদক সচিব। ১৮ এপ্রিলের উল্লিখিত দুই ঘটনা কাকতালীয়, নাকি এ দুয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে তা অবশ্য জানা যায়নি।
মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশ পুলিশের আইজি থাকাকালেই বেনজীর আহমেদ নানান দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার জন্য আলোচিত ছিলেন। তবে তা ছিল আড়ালে-আবডালে, মৃদুলয়ে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় প্রেসনোটের ভাষায় ‘মৃদু লাঠি চার্জের’ মতো। কিন্তু সাবেক হওয়ার পর বেনজীর আহমেদের বিষয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা মোটামুটি বোমশেল। তাঁর সম্পদের এত ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছে যা পড়তেই অনেক পাঠক ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু পদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে অবৈধ অর্জনে নিশ্চয়ই বেনজীর আহমেদ ক্লান্ত হননি। যদিও ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পদের বিবরণ সঠিক নয় এবং তাঁর সম্পদের একটি বড় অংশ হচ্ছে পারিবারিক ব্যবসা থেকে অর্জিত। তা হচ্ছে কৃষি খাত, বিশেষ করে মৎস্য চাষ। কৃষি কাজে এত সম্পদ অর্জন করা গেলে আমাদের কৃষক কেন অভাবে থাকে, বাংলাদেশ কেন বিশ্বের এক নম্বর ধনী দেশ হয় না? বোঝাই যাচ্ছে, বেনজীর আহমেদ আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে আর একটি নজির সৃষ্টি করেছেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
# দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ১৬ মে ২০২৪, শিরোনাম, “নজিরবিহীন বেনজীর এবং আমাদের পুলিশ”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

জনসমর্থন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে বিএনপি

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক-এগারোর সরকারের মতো দুই নেত্রীকে মাইনাস করার কোনো কৌশল এ সরকারের...

নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন, নিয়োগ পেলেন চার কমিশনারও

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে...

Recent Comments