Home শীর্ষ খবর পটুয়াখালীর কারাগারের জানালায় বসে ‘কালেকশন হাট’, নাটেরগুরু ডেপুটি জেলার

পটুয়াখালীর কারাগারের জানালায় বসে ‘কালেকশন হাট’, নাটেরগুরু ডেপুটি জেলার

মামুনুর রশিদ নোমানী, অতিথি প্রতিবেদক:
পটুয়াখালী জেলা কারাগারের অফিসের জানালা যেন এক মহা বানিজ্যের দুয়ার। মাদক কারবার থেকে শুরু করে সবকিছুরই লেদদেন চলে এই জানালা দিয়ে। সাদিনই চলে এই বারিজ্য। তবে হাট-বাজারের অবস্থা হয় বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। এই জানালর নিয়ন্ত্রনে পটুয়াখালী জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার ইব্রাহীম, বকসি কারারক্ষী জাহিদ ও কালেকশন ম্যান কারারক্ষী সোহেল।
ডেপুটি জেলার ইব্রাহীম ও বকসি জাহিদ আর সোহেল মিলে মানুষকে নানাভাবে ধোকা দিচ্ছে। জামিনের কাগজ আসতে দেরির কথা বলে আজকে আসামি বের হবে না। জমিনে ভুল আছে। পুনরায় জামিন করাতে হবে। হাইকোর্টে যেতে হবে বলে গরীব অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ইব্রাহীম চক্র। এছাড়া আসামিকে জামিননামা আসার আগে বের করে রাখে।
অনেক মাদক সেবী আসামীকে জানালা দিয়ে মাদক পাচার করে কারারক্ষী সোহেল। রাত নেই দিন নেই হুট করে কারাঅভ্যন্তরে মাদক দিয়ে আসেন। টাকা হলে তার কাছে সব সম্ভব। টাকার বিনিময়ে কারারক্ষী সোহেল কুখ্যাত ডাকাত রিপনের স্ত্রীকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করে। ডাকাত রিপনের স্ত্রীর সাথে কথা বলে। বকসি জাহিদ অসহায় বন্দীদের স্ত্রীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্তের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পটুয়াখালী জেলা কারাগারের জেলার মোঃ মোস্তফা কামাল দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য । তিনি স্ট্রোক করে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। এ সুযোগে ডেপুটি জেলার ইব্রাহীম, বকসি সোহেল, জাহিদ মিলে কারাগারকে একটা দূর্নীতির আখড়া বানিয়েছে ।
কয়েকটি ঘটনা
গত ২৯ মে তারিখ তুহিন বড়ুয়া পিতা- কালাম ,টাউন জৈনকাঠী, থানা ও জেলা পটুয়াখালী তার হাইকোর্টের জামিন-এ ভুল আছে বলে দশ হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরে তিন হাজার টাকা কমিয়ে সাত হাজার টাকায় রফা হয়। যদি হাইকোর্ট ভুল করে তাহলে তারা সে ভুল সারলো কিভাবে?
মোশারেফ পিতা- ছত্তার ,গাবুয়া, থানা ও জেলা – পটুয়াখালী তারও একই সমস্যা ।  গত ২৯ মে এসব ঘটনা ঘটে। একই দিনে জেল সুপারকে না জানিয়ে একটা জামিন নামায় জেল সুপার যায়গায় ডেপুটি জেলার ইব্রাহিম স্বাক্ষর করে ১৭ হাজার টাকার বিনিময়ে বকসি সোহেলকে দিয়ে বরগুনা কারাগারে লাল মিয়া নামের একটি জামিন পাঠানো হয়। কারা হাসপাতালে সুস্থ্য বন্দিদের ভর্তি রেখে মশারী দিবে, খাট দিবে বলে মোটা অংকের ঘুষ নেয়া হয়। বিএনপির এক সময়ের ক্যাডার ডেপুটি জেলার ইব্রাহিম সম্প্রতি শিপলু খান নামে এক হাজতিকে মাদকসহ সকল অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ভিতরে আরাম আয়েশে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কারা হাসপাতাল থাকে সুস্থ বন্দিরা
জামিনে মুক্তি পেয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে এক বন্দি বলেন, ‘কারা হাসপাতাল কোনও অসুস্থ বন্দির জায়গা নয়। বিত্তবান সুস্থ্য বন্দিরা টাকার বিনিময়ে অসুস্থ হয়ে আরাম আয়েশে থাকেন সেখানে। এসবের নেপথ্যে রয়েছেন  ডেপুটি জেলার ইব্রাহিম।
কারাগারে টাকা খরচ করলে সবকিছুই পাওয়া যায় কারা অভ্যান্তরে। শুধু খরচটা বাইরের চেয়ে দ্বিগুণ থেকে দশগুন। বন্দিদের দাবি, টাকা থাকলে কারাগারে রাজকীয়ভাবে বসবাস করা সম্ভব। ভালো খাবার থেকে শুরু করে  সবই পাওয়া যায় সেখানে। বন্দিদের কাছ থেকে টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের অনুগত ১০ থেকে ১৫ কারারক্ষী।কারা হাসপাতালে সুস্থ্য হাজতি ও কয়েদীরা প্রতিমাসে বেড প্রতি চার হাজার পাঁচশত থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে  থাকছেন। এসব টাকা বন্টন হয় কারা কর্মকর্তাদের মাঝে। এসবের নিয়ন্ত্রন করেন ডেপুটি জেলার ইব্রাহিম।
ডেপুটি জেলার ইব্রাহীম বরিশালে থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে বলে সুত্র জানায়। মাদকের হাট বসিয়েছিল কারা অভ্যান্তরে। এছাড়া মাদক বিক্রেতাদের সাথে সখ্যতা থাকার কারনে তাদের জামিনের দ্বায়িত্ব নিত এই ইব্রাহীম। ফলে জামিন করানোর জন্য মোটা অংক ব্যয় করতো ইব্রাহীমের পিছনে মাদক ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে ইব্রাহীম ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে হাসপাতালে সিট বানিজ্য,ক্যান্টিন বানিজ্য,মোবাইলে কল বানিজ্য,রেশন বানিজ্য,চালিতে ডিউটি বন্টন বানিজ্যসহ অনিয়ম দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে আসার লবিং
ইব্রাহিম আবারো বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে আসার জন্য লবিং করছে বলে সুত্র জানায়।ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে কারাঅভ্যান্তরের তথ্য বাহিরে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এছাড়া পটুয়াখালীর জেলার ও জেল সুপারের বিরুদ্ধে সযবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের কাছে অসত্য তথ্য এবং কারাঅভ্যান্তরের ছবি সাযবাদিকদের কাছে সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে। ইব্রাহিম একাধিকবার পত্র পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর “বরিশাল কারা হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ টাকার বেড বানিজ্য : নেপথ্যে ডেপুটি জেলার ইব্রাহিম” শিরোনামে বিভিন্ন অনলাইন ও দৈনিকে সযবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ইব্রাহীমের দুর্নীতির শেষ কোথায় প্রশ্ন কারাগারের সকলের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

জনসমর্থন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জে বিএনপি

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক-এগারোর সরকারের মতো দুই নেত্রীকে মাইনাস করার কোনো কৌশল এ সরকারের...

নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন, নিয়োগ পেলেন চার কমিশনারও

দখিনের সময় ডেস্ক: সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে...

আমাদের দায়িত্ব সবাইকে একটি পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা: প্রধান উপদেষ্টা

দখিনের সময় ডেস্ক: অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এই নতুন দেশে আমাদের...

Recent Comments