Home শীর্ষ খবর বেপরোয়া এক পুলিশ কনস্টেবল, বরিশাল শহরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল

বেপরোয়া এক পুলিশ কনস্টেবল, বরিশাল শহরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল

আলম রায়হান, অতিথি প্রতিবেদক:
বেনজিরের মতো দাপটের আইজি নন, আছাদুজ্জামান মিয়ার মতো ডিএমপির কমিশনার নন, এমনকি জামিল হাসানের মতো বরিশাল রেঞ্জের সাবেক ডিআইজিও নন; পুলিশের সাধারণ এক কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক। কিন্তু তাতে কী? তার দাপটেই অনেকটাই থরকম্প অবস্থা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সরকারের উচ্চপদস্থ সাবেক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান খানের বাড়ি দখল করে রেখেছেন পুলিশের এই কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক।
কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের এ ঘটনা ঘটেছে খোদ বরিশাল শহরের জিয়া সড়কে। দখলদার এই পুলিশ কনস্টেবল বর্তমানে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় কর্মরত আছেন। তার দখলকৃত বাড়িটি নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের জিয়া সড়কে (মৃধা বাড়ি গলি) অবস্থিত।
বরিশাল শহরে জিয়া সড়কের মৃধাবাড়ি গলিতে ক্রয়কৃত ২২ শতাংশ জমিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাউন্ডারী ওয়াল ও ৪ কক্ষের একটি টিনসেড আধাপাকা ঘর নির্মান করেন। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে মাসিক ৮ হাজার টাকা ভাড়ায় এই বাড়িতে ওঠেন পুলিশ কনস্টেবল মোঃ নজমূল হক। বাড়ির মালিক চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাড়ি ছেড়ে দেবার নেটিশ দেন। কিন্তু বেঁকে বসেন কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান ও কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক আপন খালাতো ভাই। এ সুবাধে স্বল্প ভাড়া নির্ধারণ করার পাশাপাশি বাড়ি দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হয় নাজমুল হককে। এই দেখা শুনার ছদ্মাবরণে অন্য মতলব আটেন উল্লেখিত পুলিশ কনস্টেবল। সে এখন বাড়ির মালিকানা দাবি করে বসে আছেন। এদিকে বাড়ির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান পুলিশের বড় কর্তাদের দ্বারেদ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান

পুলিশের দুই
দুয়ারে ধর্ণা
পুলিশ কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হকের জুলুমের প্রতিকার চেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান বিএমপি কমিশনার জিহাদুল কবিরের স্মরণাপন্ন হন। ঘটনাস্থল তাঁর এলাকাধীন হলেও অভিযুক্ত কর্মরত বরিশাল রেঞ্জের অধীনে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায়। এ বাস্তবতায় বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি জামিল হাসানের দুয়ারেও ধর্না দেন ভুক্তয়োগী মোঃ আমিনুর রহমান খান। বিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করে কিছু ফল পেলেও এখন পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি রেঞ্জ ডিআইজির দরবারে!
বিএমপি কমিশনারের পদক্ষেপ
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খানের ৬ মে দাখিল করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেন বিএমপি কমিশনার জিহাদুল কবির। আদিষ্ট হয়ে এ বিষয়ে তদন্তভার গ্রহন করেন বিএমপির কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নাফিজুর রহমান। এবং দফায় দফায় বিস্তারিত তদন্ত শেষে তিনি ২৫ মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত রিপোর্টে পর্যালোচনায়
যা বলা হয়েছে
বিএমপি কমিশনারের বরাবরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত রিপোর্ট সহকারী পুলিশ কমিশনার নাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানাগেছে। তিনি ৩০ মে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ।
সহকারী পুলিশ কমিশনার তার তদন্ত রিপোর্টে দফাওয়ারী পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছেন, “আমার অনুসন্ধান কালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান ও দালিলিক কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান, পিতা মৃত মকবুল আহমেদ খান, সাং. দিলামনি লজ, খান ম্যানশন, জিয়া সড়ক (মৃধাবাড়ি গলি), ২২ নং ওয়ার্ড, থানা কোতয়ালী, জেলা বরিশাল, মোবাইল নম্বর ০১৭৩০০৫৯৩৫৬ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। অভিযোগে উল্লেখিত অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমুল হক মোল্লা, বিপি ৬৯৮৮০৮৫২২৫, পটুয়াখালি জেলা, গলাচিপা থানা অভিযোগকারীর আপন খালাতো ভাই। অভিযুক্ত কনস্টেবল অভিযোগকারীর অভিযোগে উল্লেখিত বাসায় থাকতে চাইলে, তিনি মানবিক দিক চিন্তা করে বাসায় থাকতে দেন। কিন্তু অভিযুক্ত কনস্টেবল অভিযোগকারীকে কোন ভাড়া প্রদান করতেন না। অভিযোগকারী তার পরিবার নিয়ে উক্ত বাসায় বসবাস করার জন্য বাসা ছেড়ে অভিযুক্ত কনস্টেবলকে যেতে বললে বিরোধ সৃষ্ট হয়। অভিযোগকারী বেশ কয়েকবার স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারা সালিশ মিমাংসার মাধ্যমে অভিযুক্ত কনস্টেবলকে বাসা ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও সে বাসা ছেড়ে দিবে না মর্মে জানায়। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত কনস্টেবল অভিযোগকারীকে জানান, তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাকে উক্ত বাসা থেকে সরানো যাবে না। এখানে উল্লেখ থাকে যে, অভিযোগকারী নিঃসন্তান হওয়ায় অভিযুক্ত কনস্টেবল এই ধারণা পোষণ করতেন যে ২২ শতাংশ জমি অভিযোগকারী তাকে দান করবেন বা উক্ত জমি থেকে কিছু অংশ তাকে লিখে দিবেন। অভিযুক্ত কনস্টেবল মিথ্যা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দাবী করেন যে, অভিযোগকারীর উক্ত জমিতে বাউন্ডারী ওয়াল ও টিনশেট বিল্ডিং নির্মানে ২৮ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসংক্রান্ত অভিযুক্ত কনস্টেবল দালিলিক কাগজপত্র বা কোন তথ্য প্রমান উপস্থিত করতে পারেন নাই। মূলত অভিযুক্ত কনস্টেবল লোভের বশবর্তী হয়ে এবং ক্ষমতা প্রদর্শণ করে অভিযোগকারীর বসত ভিটা জোরপূর্বক অবৈধভাবে দখল করে আছেন।”

অবৈধ দখলদার কনস্টেবল মোঃ নাজমুল হক। তার প্রসঙ্গে তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নজমুল হকের আচরণ বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। যা জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছে।”

তদন্ত রিপোর্টে মতামত
তদন্ত রিপোর্টে মতামত হিসেবে তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার নাফিজুর রহমান বলেছেন. “আমার সার্বিক অনুসন্ধানকালে এই মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর রহমান খান এর আপন খালাতো ভাই অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমূল হক মোল্লা, বিপি ৬৯৮৮০৮৫২২৫, পটুয়াখালি জেলা, গলাচিপা থানা। অভিযুক্ত কনস্টেবল অভিযোগকারীর বাসায় থাকতে চাইলে আপন খালাতো ভাই বিধায় তিনি তাকে মানবিক দিক চিন্তা করে তাকে থাকতে দেন। অভিযোগকারী নিজ প্রয়োজনে বসত ভিটায় থাকার উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত কনস্টেবলকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বললে, সে বাসা ছেড়ে দিবে না মর্মে চূড়ান্তভাবে অভিযোগকারীকে জানিয়ে দেন। অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমুল হক বাংলাদেশ পুলিশের শৃংখলা বাহিনীর একজন সদস্য হয়ে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে লোভের বশবর্তী হয়ে এবং ক্ষমতা প্রদর্শন করে অভিযোগকারীর বসত ভিটা অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করে আছে। তার এই অসৌজন্যমূলক আচরণ বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ; যা জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমুল হক কর্তৃক এহেন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করে অত্র অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।”

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি জামিল হাসান

কিছুই পাওয়া যায়নি রেঞ্জ
ডিআইজির দরবারের
অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমূল হক বরিশাল রেঞ্জের অধীনে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানায় কর্মরত। এ বাস্তবতায় বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি জামিল হাসানের দুয়ারেও ধর্না দেন ভুক্তয়োগী মোঃ আমিনুর রহমান খান। সেখানে তিনি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ১৬ মে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নোটিশ করা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত কনস্টেবল/৪১৩ মোঃ নাজমূল হক হাজির হননি। তার কথিত একজন প্রতিনিধি হাজিরা দেন।
ভুক্তয়োগী মোঃ আমিনুর রহমান খানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এডিশনাল এসপি মাসুদুল ইসলামকে তদন্তের ভার দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। ২৩ জুন টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এদিকে একটি সূত্র বলছে, বিদায়ী রেঞ্জ ডিআইজি জামিল হাসান চাননি বলে এতোদিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

সন্তানের অত্যাচারে শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যা

দখিনের সময় ডেস্ক: সৈয়দ আলী আকনে (১০৪) নামের এক শতবর্ষী বৃদ্ধের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিষপানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সৈয়দ আলী পিরোজপুরের ইন্দুরকানী...

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: সিইসি

দখিনের সময় ডেস্ক: নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, নির্বাচন আয়োজন করতে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা দরকার। সবার সহযোগিতা...

বিশাল নিয়োগ আসছে, ক্যাডার ১২ হাজার ৭১০ এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯

দখিনের সময় ডেস্ক: পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে পাঁচ...

Recent Comments