ব্রিগেডিয়ার আযমীর আট বছর গুম থাকার কাহিনী, সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তার আহবান

দখিনের সময় ডেস্ক:

দীর্ঘ আট বছর গুম থাকার বর্ণনা দিয়েছেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। মঙ্গলবার(৩ সেপ্টেম্বর) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ বলেন, তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৩শে অগাস্ট নিখোঁজ হন জেনারেল আযমী। যারা তাকে এবং অন্যদেরকে গুম করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে।

সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, সেদিন সরকারের গুণ্ডাবাহিনী আমার বাসায় আসে। তাদের মাঝে যাকে আমার অফিসার বলে মনে হয়েছে, সে আমার সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। আমাকে তুই করে কথা বলেছে। চরম দুর্ব্যবহার করেছে। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তার জবাব দেয়নি। তারা খালি বলেছে, (হাতকড়া পড়াতে) হাত দেন। একপর্যায়ে আমি আমার মানসম্মান বাঁচাতে হাত দিয়েছি। নয়তো আমার গায়ে হাত উঠিয়ে দিত। এটাই বাকি ছিল। এরপর তারা তার চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে ওঠায়। তারপর একটি মুখোশ পরায়। তারপর দেড় ঘণ্টার মতো পার হয়ে গাড়িটি একটা জায়গায় থামে এবং তাকে একটা রুমে নিয়ে চোখ হাত খুলে দেওয়া হয়।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, এরপর প্রতিদিন নতুন কায়দায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হবে। সেজন্য তিনি গাড়িতে বসে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তাকে ক্রসফায়ারের জন্য নিচ্ছে কিনা। আমার পাশের একজন বললো, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে কথা বলবে। প্রথমদিন ভোররাতের দিকে তিনে ওজু করে এসে তাহাজ্জুত নামাজ, ফজর নামাজ পড়লাম। তাকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো, সেখান থেকে টয়লেটে যাওয়ার দূরত্ব ছিল ৫০ কদম। তিনি বলেন, আমার দু’হাত বেঁধে, চোখ বেঁধে, মুখোশ পরিয়ে নিয়ে যেত। টয়লেটের ভেতরে গিয়ে চোখ-হাত খুলে দিত। বাইরে থেকে স্টিলের দরজা বন্ধ করে তালা মেরে রাখতো। কাজ শেষ হলে তারা আবার দরজা খুলে দিতো। তারপর চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে আবার রুমে নিয়ে আসতো।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, কারও পায়ের আওয়াজ শুনলেই মনে হত, এই বুঝি আমাকে ক্রসফায়ারে নিয়ে যাচ্ছে। আমি নামাজ পড়ে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে বললাম, এই নামাজ যেন আমার শেষ না নামাজ হয়, আমার লাশ যেন কুকুর বিড়াল না খায়। এরপর একটা পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান ও কতক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরেছে, তা জানেন না। যখন জ্ঞান ফিরেছে, তখন তাকে বলা হয় যে তার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো। তিনি জানান, তাকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে দিন-রাত বোঝা যেত না।

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, আমি গেল আট বছর সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় পৃথিবীর কোনো আলো দেখিনি, আকাশ দেখিনি সূর্য দেখিনি। মাঝে মাঝে তারা চোখ এমন ভাবে বাঁধতো, মনে হচ্ছিল আমার চোখের মনি ফেটে যাবে। হাতকড়া পরা থাকতে থাকতে হাতে ঘা হয়ে যেত। আট বছর আমি এক অন্ধকার ঘরে ছিলাম, পৃথিবীর কিছুই আমি দেখতে পাইনি এ সময়।

ফিরে এসে তিনি জানতে পেরেছেন, তাকে তুলে নেওয়ার পর ‘তারা’ তার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করেছে এবং তাকেও তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, তারা আমার বাসার যুবতী কাজের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই “২৯ হাজার ৭৯৪ ঘণ্টার নির্মম জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেইসাথে, সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকেও ধন্যবাদ দেন তিনি। অন্তর্র্বতীকালীন সরকার বাংলাদেশকে ৫০ বছর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান, যাতে তারা এই সরকারকের প্রতি সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত রাখে।