বিশেষ প্রতিনিধি:
একদিকে সংকট, অন্যদিকে চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস যাবে সারাদেশে। বিশ^বাজারে দাম অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে এলএনজি আমদানি নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। এ অবস্থায় ভোলায় পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজিতে (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) রূপান্তরিত করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, ভোলায় প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট বা টিসিএফ গ্যাস আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) ধারণা করছে ভোলায় আরও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাপেক্স কর্মকর্তাদের মতে, দ্বীপজেলা ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে। এখানে ইতিপূর্বে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও অন্তত দুই ট্রিলিয়ন গ্যাস আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোলায় বর্তমানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে ছয়টি কূপ খনন করা হয়েছে। তাতে গ্যাসের মজুদ রয়েছে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট। আবিষ্কার হওয়া গ্যাসক্ষেত্রগুলো হলো শাহবাজপুর ইস্ট-১ ও ভোলা নর্থ-১ ।
ভোলার গ্যাস কীভাবে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যায়, সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে জ্বালানি বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনকে (পেট্রোবাংলা)। পাইপলাইন অথবা এলএনজিতে রূপান্তর করে কী প্রক্রিয়ায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করতে পেট্রোবাংলাকে বলা হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও বলা হয়েছে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে।
মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা ভোলায় আবিষ্কৃত গ্যাস মূলত ছোট একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ ছাড়া তেমন কাজে লাগছে না। অথচ বিদেশ থেকে ব্যায়বহুল এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে হচ্ছে। দুই ঘণ্টা যদি জাহাজ থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা বন্ধ থাকে, তা হলেই দেশে গ্যাসে সংকট দেখা দেয়। শিল্পকারখানা গ্যাসের চাপ কম অনুভব করে। এ ছাড়া এলএনজি আমদানির চাপ সামলাতেও জ্বালানি বিভাগ মরিয়া। ফলে ভোলার আবিষ্কৃত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করছেন নীতিনির্ধারকরা। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশাল নদী পেরিয়ে পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা কঠিন ও ব্যয়বহুল হলেও তার উপায় খুঁজছে কর্তৃপক্ষ।
ভোলায় গ্যাস আছে এমন প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৫২ সালে। এর পর থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত জরিপ করে গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে শাহবাজপুরকে চিহ্নিত করা হয়। পাকিস্তান সেল অয়েল কোম্পানি সিঙ্গেল কনডাক্টেড ২ডি সিসমিক জরিপ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪-৭৫ সালে ফেস-২ প্রকৃত সিসমিক জরিপ করা হয়। ফেস ৩-এ ১৯৮৭ সালে ফের সিসমিক জরিপ হয়। ওই জরিপ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৪ সালে শাহবাজপুর-১ গ্যাসক্ষেত্রে শুরু হয় খনন। ১৯৯৫ সালে উত্তোলন করা গ্যাসে আগুন প্রজ্বালন করা হয়। পরে ২৭ বছর পর বর্তমান সরকারের আমলে উদ্যোগ নেওয়া হয় ফেস-৪ হিসেবে নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করার। ২০১৪-১৫ সালে বাপেক্সের তত্ত্বাবধানে ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থ্রিডি সিসমিক জরিপ করে দুটি আলাদা গ্যাসক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এ দুটিই হচ্ছে ইস্ট-১ ও নর্থ-১। একই জরিপ অব্যাহত থাকলে আরও গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।