আলম রায়হান ॥
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় কর্মরত এসআই বশির আহমেদ ও এএসআই মো. শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারসহ তাদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে। সূত্রমতে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তাদের বরখাস্তের আদেশ দেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।
এএসআই শরিফ বরখাস্ত হবার বিষয়টি বিশেষ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কারণ বরিশালে ওসি আনোয়ারের পরই শরিফ বিশেষ ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত ছিলন। কেউ কেউ ফান করে বলতেন, কীর্তনখোলা নদীর পানি শুকিয়ে গেলেও মাদকের পাইকারী বাজার বুখাইনগর থেকে এএসআই শরিফকে কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু অনেক বিলম্বে হলেও বিএমপির বর্তমান কমিশনার বুখাইনগর থেকে এএসআই শরীফকে সরিয়েছেন এবং অবশেষে সাময়িক বরখাস্ত করলেন।
এসআই বশির আহমেদ ও এএসঅই মো. শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, উল্লেখিত দুই পুলিশ সদস্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এ ছাড়া এ্এসআই শরিফ চরমোনাইতে বেশ কিছু অনিয়মন করেছেন। যার সহযোগী ছিলেন এসআই বশির। বিভাগীয় তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাএদর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল রাতে বরিশাল সদর উপজেলার বুখাইনগর গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় দলিল লেখক রিয়াজকে কুপিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এএসআই বশির আহমেদ। ২০ এপ্রিল নিহতের স্ত্রী লিজা পরকিয়া প্রেমিক মাসুমকে নিয়ে স্বামী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের অধিকতর তদন্তে গ্রেফতার হওয়া তিন যুবক গত ২৮ আগস্ট স্বীকারোক্তিতে বলেছে, ঘরে চুরি করতে ঢুকলে রিয়াজ জেগে ওঠায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লিজার অভিযোগ, উপপরিদর্শক বশির আহমেদ তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে আদালতে জবানবন্দী দিতে বাধ্য করেছিল।
এদিকে এএসআই শরীফ প্রায় এক দশক বুখাইনগর এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে বদলী করা হলেও আবার তিনি বুখাইনগর এলাকায় পোস্টিং-এর ব্যবস্থা করতে ‘সক্ষম’ হয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। মহুরী রিয়াজ হত্যার পলাতক আসামী ধরার নামে মরহুম সাংবাদিক লিটন বাশারে বাড়িতে মধ্যরাতে তান্ডব চালাবার ঘটনায় তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান বিপিএম এবং ডিসি (সা্উথ) মোহাম্মদ মোয়জ্জেম হোসের ভূঁঞা বিরক্ত হলেও এএসআই শরীফকে বুখাইনগর থেকে সরাতে পারেননি। সূত্রমতে সে সময় এএসআই শরীফের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন কোতয়ালী থানার ওসি নূরুল ইসলাম। কোতয়ালী থানায় আসার আগে তিনি কাউনিয়া থানার ওসি ছিলেন। এদিকে এএসআই শরিফ বহু বছর ধরে অনেকরে ‘আয়ের পুত’ হিসেবে পরিচিত।
মহুরী রিয়াজ হত্যার মূল আসামী না ধরে এএসআই শরীফের প্ররোচনায় মরহুম সাংবাদিক লিটন বাশারের বাড়িতে মধ্য রাতে পুলিশী তান্ডব এবং বাহবা নেবার সংবাদ সম্মেলন নিয়ে ঢাকাটাইমস-এ লিখে ছিলাম ২০১৯ সালের ২২ এপ্রিল প্রকাশিত কলাম।শিরোনাম ছিলো ,“মূল আসামি না ধরেই পুলিশের বাহারি সংবাদ সম্মেলন!”