Home নির্বাচিত খবর ১৮ আগস্টের ঘটনা কোন ব্যাখ্যায় পড়ে না: তালুকদার ইউনুস

১৮ আগস্টের ঘটনা কোন ব্যাখ্যায় পড়ে না: তালুকদার ইউনুস

আলম রায়হান ও কাজী হাফিজ : 

রাজনীতিতে হাঁটতে হয় অনেক পথ। এ পথ মসৃন নয়, ভোগ করতে হয় জেল-জুলুম। অনেকের ক্ষেত্রেই সারাজীবন কাটে নানান দুর্যোগের মধ্যে। এমনকি রাজনৈতিক কারণে জীবন দেবার ঘটনাও কম নয়। কখনো এটি ঘটে রাজপথে প্রকাশ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলীতে, কখনো আবার আততায়ীর হাতে। আবার কখনো বিচারের নামে প্রাণ হরণ করা হয় রাজনীতিকের। প্রাণ দিতে হয় ফাঁসীর মঞ্চে, কেউ আবার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত হবার পর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ফাঁসির মঞ্চে যাওয়া থেকে।

রাজনীতির কঠিন এ ধারায় নানান অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ রাজনীতিক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস। তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবার দিনক্ষণও নির্ধারিত হয়েছিলো ৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। রাজনীতির এতোটাই কঠিন পথ অতিক্রম করেছেন তিনি। এরপরও তালুকদার ইউনুসের উচ্চরণ, ‘বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে ১৮ আগস্টের ঘটনা কোন ব্যাখ্যার আওতায়ই পড়ে না।’

বরিশাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেড তালুকদার মোঃ ইউনুসের সাথে কথা হয় ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়।

একজন রাজনীতিককে যেতে হয় নানান সংকটের মধ্য দিয়ে। অবশ্য রাজনীতিতে প্রাপ্তিরও একটি বিষয় আছে। কিন্তু কারোকারো ক্ষেত্রে এই প্রাপ্তি পৌঁছায় দৃষ্টিকটু পর্যায়ে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাপ্তিযোগ ঘটে কদাচিৎ। তাও হতে পারে ‘কচুপাতার পানি’। রাজনীতির এই কঠিন পথচলায়ই বেড়ে উঠেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস।

টর্কি বন্দর স্কুলে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র থাকাকালে ৬৬ সনের দিকে তালুকদার ইউনুস রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। গৌরনদী কলেজের ছাত্র থাকাকালে ছাত্রলীগ  নেতা ছিলেন।  ৬৯-এর উত্তাল গনঅদ্ভ‚ত্থানে রাজশাহী বিশ্বববিদ্যালয়ে শামসুজ্জোহা গুলিতে নিহত হবার ঘটনায় সারাদেশের মতো গৌরনদীও উত্তাল হয়ে ওঠে। ছাত্ররা শাবল হাতুড়ি দিয়ে কলেজের নামফলক গুড়িয়ে দেয়। তখন এ কলেজের নাম ছিলো আব্দুল মোনেম খান কলেজ।

বৃটিশ আমল থেকেই গৌরনদী শিল্প-সস্কৃতি-শিক্ষায় সমৃদ্ধ জনপদ ছিলো। যে ধরা এখনোও কিছুটা বজায় রয়েছে। এই গৌরনদী থেকে রাজনীতি শুরু এডভোকেড তালুকদার মোঃ ইউনুসের। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারত গেছেন। যোগ দিয়েছেন মুজিব বাহিনীতে। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দেরাদুনে। কিন্তু পথ প্রদর্শকের বিশ্বাস ঘাতকতায় তাদের পুরো দলটি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন ৭১ সালের ৪ অক্টোবর। তবে তাদের সরাসরি হত্যা করা হয়নি। সামরিক আইনের বিচারে তাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। দন্ড কার্যকর করার নির্ধারিত দিন ছিলো ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। কিন্তু এর আগেই ৬ তারিখ রাতে যশোহর মুক্ত হয়ে যায়। ফলে জেল থেকে মুজিব বাহিনীর সদস্যরা মুক্ত হন ৭ ডিসেম্বর।

এখানেই শেষ নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের পর তালুকদার মোঃ ইউনুস কারাভোগ করেছেন একটানা ১৭ মাস। এছাড়া তার রাজনৈতিক জীবনের নানান বাঁকে রয়েছে নানান টানাপোড়ন। দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন এরশাদ সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে সকাল সাড়ে নয়টা-দশটার মধ্যেই। অতএব আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার ইউনুসের নিশ্চিত পরাজয় হয়। তবে বেশ আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তাঁর মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি। কিন্তু এ নিয়ে তার কোন হতাশা আছে- এমনটি শোনেননি কেউ। এ ব্যাপারে তার উচ্চারণ হচ্ছে, রাজনীতিতে চড়াই উৎড়াই থাকেই। এ নিয়ে হতাশা অথবা ক্ষোভের কিছু নেই। হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত হৃষ্ট চিত্তে মেনেনিতে হয়। আর চ‚ড়ান্ত বিচারে রাজনীতি হচ্ছে, দেশ ও মানুষের জন্য। ফলে রাজনীতিতে নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি মূল বিবেচ্য হতে পারে না।

বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে ১৮ আগস্টের ঘটনা প্রসঙ্গে তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, সেদিন যে ঘটনা ঘটেছে বা ঘটানো হয়েছে সেরকম কোন বাস্তবতা ছিলো না। এ ঘটনায় রাজনীতি ও প্রশাসনসহ সকল ইতিবাচক শক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর এর বিরূপ প্রভাব কেন্দ্রের রাজনীতি ও প্রশাসন পর্যন্ত পৌঁছেছে। এনিয়ে মানুষ ছিলো আতংকগ্রস্থ। তবে আশার কথা হচ্ছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয়ভাবে একটি হেপী এন্ডিং-এ পৌঁছানো গেছে। এবং এটিই হচ্ছে জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন।

প্রশ্ন: স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আপনাদের ‘সমঝোতার ফটো সেশনের’ পরও তো মামলা থেকে গেছে। গ্রেফতারকৃতদের জামিন হয়েছে দুই দফায়। মামলার নাম উল্লেখ করা আসামী আছে আরো অন্তত ৭০ জন।  আর নামে-বেনামে আসামী প্রায় ছয়শ’। তা হলে আপনার ভাষায় ‘হেপি এন্ডিং’-এর অর্থ কী?

উত্তর: সমঝোতা বৈঠকের পর আর কোন গ্রেফতার নেই। বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিতে হবে। আইনের তো একটি নিজস্ব গতি আছে। কোন পক্ষই আইনের বিষয়টি অবজ্ঞা করতে পারবে না। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি।

প্রশ্ন: তা হলে কি বিষয়টি আইনের জালে আটকা পড়ে লম্বা প্রক্রিয়ার চক্করে পড়ে গেলো? এ আশংকা কী থেকেই যায় না!

উত্তর: আমার তা মনে হয় না। বাস্তবতা আপনার উল্লেখিত আশংকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন: মামলা জড়িত আইনের জাল থেকে আপনার দলের নেতা-কর্মীদের মুক্ত হতে কত সময় লাগতে পারে?

উত্তর: দিনক্ষণ বলতে পারবো না। তবে এইটুকু বলতে পারি, অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: ‘ফলোড বাই ডিনার’ সমঝোতা যদি ভেঙ্গে যায়?

উত্তর: এরকম আশংকা নেই!

প্রশ্ন: অন্য প্রসঙ্গে আসি। আপনার মূল্যয়নে ১৮ আগস্টের কোন ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না। তা হলে ঘটনাস্থলে আপনার যাবার ব্যাখ্যা কী?

উত্তর: মেয়র সাদিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন- এই খবর পেয়ে আমি গেছি রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে। এ খবরেই অন্যান্য নেতাকর্মীরাও গেছেন।

প্রশ্ন: তা হলে মেয়র গিয়েছিলেন কোন কারণে?

উত্তর: পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গুলিবিদ্ধ হবার খবর শুনে মেয়র গিয়েছিলেন। মেয়র হিসেবে তিনি যেমন নগরপিতা, তেমনই সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিভাবক। তিনি একাই গিয়েছিলেন। কিন্তু তার উপস্থিতির পরও এক তরফা গুলি বর্ষণ বন্ধ না হওয়ায় তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এর মধ্যেই রটে যায়, মেয়র গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। মেয়র ও আমাদের নেতা কর্মীদেরকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই।

প্রশ্ন: ধন্যবাদ! কেন?

উত্তর: অসীম ধৈর্যের কারণে। মেয়র গুলিবিদ্ধ হবার খবর পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এসেছে, নেতা-কর্মী এসেছেন। কিন্তু কেউ বিশৃংখলা করেননি।

প্রশ্ন: কিন্তু এরপরও তো ১০ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছিলো। আপনি কি মনে করেন?

উত্তর: দশ প্লাটুন বিজিবি তো দূরের কথা, বাইরে থেকে একজন পুলিশ আনার অবস্থাও সৃষ্টি হয়নি। শুধু তাই নয়। ১৮ আগস্ট রাতে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে আনসারের গুলি করতে হবে। গায়ে পড়ে ইউএনও ঘটনা ঘটিয়েছেন। কার পোস্টার কে ছিড়ছে, তা দেখার দায়িত্ব ইউএনওর নয়!

প্রশ্ন: পরদিন কালীবাড়ি রোডে ব্যাপক  র‌্যাব-পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

উত্তর: আইনশৃংখলা বাহিনী মেয়রের বাড়ী ঘেরাও করার খবর পেয়ে আমি গেলাম। পুলিশ-র‌্যাব সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আমি অবাক হয়েছি। এটি গ্রহণযোগ্য কোন বিষয় নয়। আমি উপস্থিত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললাম। সে জানালো, মেয়রের নিরাপত্তার জন্য তারা এসেছে। আমি বললাম, নিরাপত্তাহীনতার কথা তো আমরা বলিনি। সিকিউরিটির সমস্যা নিয়ে কেউ তো অভিযোগ করেনি! তাদেরকে চলে যেতে বলি। কিছুক্ষণ পর তারা চলে যায়।

প্রশ্ন: এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

উত্তর: মেয়রের বাড়িতে এ অবস্থা গোলমাল সৃষ্টির আলামত বলে মনে হয়েছে। ১/১১ সরকারের সময়ও অই বাড়িতে এতো র‌্যাব-পুলিশের উপস্থিতি দেখেছি। সেদিন অস্ত্র খোঁজ করার নাম করে পুকুর সেচা হয়েছিলো। সেবারের মতো এবারও বিষয়টি কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। অই বাড়িটির সঙ্গে শ্রদ্ধা ও আবেগ জড়িত। অই বাড়িটির সঙ্গে ৭৫-এর ১৫ আগস্ট শহীদ আবদুর রব সেনিয়বিাতর স্মৃতি জড়িত। ১৫ আগস্ট সাদিক যখন রক্তস্নাত তখন তার বয়স দেড় বছর। এ প্রসঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, লংকা পোড়ানোর জন্য একটু কান কথাই যথেষ্ট!

প্রশ্ন: বরিশাল আওয়ামী লীগ কি বহুধা বিভক্ত, এ নিয়ে আপনারা উদ্বেগে আছেন?

উত্তর: মোটেই না! দেশে আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের কোন পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়নি। এ রকম কোন আশংকাও নেই। বরিশালও কোন উদ্বেগ নেই।

সর্বশেষ এক প্রশ্নের উত্তরে পোড় খাওয়া জনসম্পৃক্ত মেধাবী রাজনীতিক তালুকদার মোঃ ইউনুস দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমি গুরুমারা শিষ্য নই!’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

চীনের সবচেয়ে ধনী টিকটকের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং

দখিনের সময় ডেস্ক: টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং (৪১) চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকার শীর্ষ স্থান দখল করেছেন। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ...

প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি হার্টের জন্য ভালো?

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমকে সবচেয়ে উপকারী এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি যুগ যুগ ধরে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যুক্ত রয়েছে। ডিম...

মানবাধিকার কর্মী মিনা ফারাহকে জামায়াত আমিরের ফোন

দখিনের সময় ডেস্ক: বিশিষ্ট কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী মিনা ফারাহকে ফোন করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বাংলাদেশের কঠিন...

পঞ্চগড়ে চা খামারিদের ক্ষমতায়নে ইউসিবির কর্মশালা

দখিনের সময় ডেস্ক: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার চা খামারিদের জন্য একটি কর্মশালা আয়োজন করেছে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে আর্থিক...

Recent Comments