মোঃ সাগর হাওলাদার :
অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনার অভিযোগে ঢাকার সিআইডি পুলিশের জালে আটক হয়েছে ঝালকাঠির মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজীর (৩৫) প্রতারনা চক্রের দুই সদস্য।
অস্ট্রেলিয়া থেকে মাঝে মধ্যেই দেশে এসে টার্গেট করে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে কম খরচে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। এক পর্যায়ে ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় রোজী ও তার সহযোগী চক্র।
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করে ধূর্ত রোজী সব কলকাঠি নাড়লে দেশে অবস্থানরত প্রতারক চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে লুটে নেয় টাকা-পয়সা।
রোজী ও তার চক্রের হাতে প্রতারিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত সাতজন ভুক্তভোগীকে পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করেছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী গং।
তেমনি একজন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম (৪৭) কে স্বপরিবারে অস্ট্রেলিয়া নেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে উম্মে ফাতেমা রোজী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারিত হওয়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
সেই মামলার তদন্ত নেমে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রোজীর প্রতারনা চক্রের সহযোগী মো. সাইমুন ইসলাম (২৬) ও আশফাকুজ্জামান খন্দকার (২৬) নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে এই চক্রের মূল হোতা রোজী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দোগ নেবেন বলে সিআইডি জানিয়েছে।
১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে মালিবাগস্থ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ান জাল ভিসা প্রস্তুত করে বাংলাদেশি নিরীহ মানুষকে অস্ট্রেলিয়ায় নেয়ার কথা বলে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী। মাঝেমধ্যে সে দেশে এসে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। দেশের উচ্চবিত্তদের টার্গেট করে আত্মীয়তার ভিসায় অস্ট্রেলিয়া নেয়ার প্রলোভন দেখান। সপরিবারে গেলে (স্বামী-স্ত্রী) ২৩ লাখ আর একা গেলে ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে প্রস্তাব দিতো।
নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান ইমিগ্রেশন কনস্যূলার জেনারেল হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে উম্মে ফাতেমা রোজী আগ্রহীদের অস্ট্রেলিয়া প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহনের ছবি দেখিয়ে বশ করতেন।
এ সব দেখে ভুক্তভোগীরা কিছুটা বিশ্বাস স্থাপনের পর অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশনমন্ত্রী এলেক্স হাউকির সঙ্গেও তার সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান। পরে ধাপে ধাপে কাগজপত্র ও ভিসার কথা বলে টাকা নিতে থাকেন। বৈধ ভাবে অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যাওয়ার এমন প্রলোভনে পড়ে অভিযোগকারীদের কয়েক কোটি টাকা প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।
সিআইডির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন, এমন ফাঁদে পড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের আট সদস্যসহ অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম। এজন্য দুটি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রোজীর একাউন্টে দেন। এরপর কাগজপত্র ও ভিসা হাতে পেয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান সবগুলোই ভুয়া এবং জাল। এভাবে প্রতারণা করে রোজী প্রায় একাধিক মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
রোজীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি তাকে দ্রুতই দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবো। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বিস্তারিত তার থেকে জানা যাবে।
এসময় ‘বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার রোজী চক্রের দু’জনের কাছ থেকে জাল ভিসা প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, অস্ট্রেলিয়ার জাল ভিসা গ্রান্ট নোটিশ সাতটি, ফ্রি চিকিৎসার হেলথ মেডিকেয়ার কার্ড ৫টি ও অস্ট্রেলিয়া বিমানের টিকিট ৬টি জব্দ করা হয়।
Post Views:
42