Home শীর্ষ খবর প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর

প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর

দখিনের সময় ডেস্ক:

আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো খবর। সেটি হচ্ছে, প্রশ্নফাঁস চক্রে রয়েছেন বুয়েটের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। গুণধর এই শিক্ষকের নাম নিখিল রঞ্জন ধর। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান নিখিল রঞ্জন ধর। খন্ডকালীন হিসেবে তিনি আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (এইউএসটি) কাজ করতেন।

যখন থেকে এইউএসটি রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পেল, আশ্চর্যজনকভাবে তখন থেকে ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করে নিখিল রঞ্জনের ব্যাংক হিসাব। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার(১৮নভেম্বর) দীর্ঘ মিটিং হয়। এই বিষয়ে দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরকে নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

কীভাবে স্বল্প সময়ে নিখিল রঞ্জন এত ধন-সম্পদের মালিক হলেন, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে বেরিয়ে আসছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য হিসেবে নাম এসেছে এই শিক্ষকের। যদিও নিখিল রঞ্জন নিয়োগ পরীক্ষা কমিটিতে ছিলেন না। কিন্তু সূত্র বলছে, কমিটিতে না থাকলেও তিনি প্রশ্ন ছাপার দিন সকাল থেকে ভোর পর্যন্ত আহছানিয়া মিশনের ঢাকার আশুলিয়ার ছাপাখানায় অবস্থান করতেন। ফেরার সময় দুই কপি প্রশ্ন তিনি সঙ্গে আনতেন। প্রশ্ন ব্যাগে ঢুকিয়ে দিতেন এইউএসটির পিয়ন দেলোয়ার।

২০১৪ সাল থেকে গত ছয় বছরে নিখিল রঞ্জন ধরের একটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া শেষ তিন বছরে তিনি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন ১ কোটি ৮২ লাখ টাকার। আমাদের সময়ের অনুসন্ধান ও প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ১১ জনের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার টেন্ডার এনে দেওয়াসহ এইউএসটির বিভিন্ন কাজ করে দিতেন বুয়েট শিক্ষক নিখিল। তিনি পরীক্ষা কমিটির কেউ না হলেও তার তত্ত্বাবধানেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরীক্ষা নেওয়া হতো। তাই ছাপা শেষ হওয়ার পর তিনি দুই কপি প্রশ্ন ব্যাগে করে নিয়ে আসতেন।

আহছানিয়া মিশন প্রেসের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, তাদের ছাপাখানায় সিসি ক্যামেরাসহ ন্যূনতম নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেই। আর সেটারই সুযোগ নিয়েছে প্রশ্নফাঁসকারীরা। গত ২ নভেম্বর আহছানিয়া মিশন ছাপাখানায় সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। সেদিন সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নিখিল রঞ্জন ওই ছাপাখানায় ছিলেন। আসার সময় প্রশ্নের দুটি কপি তিনি নিয়ে যান। জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার এইউএসটির পিয়ন দেলোয়ার হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে নিখিল রঞ্জন ধরকে প্রশ্ন দেওয়ার ব্যাপারে জানিয়েছেন। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেও তিনি ওই বুয়েট শিক্ষকের নাম বলেছেন।

দেলোয়ার তার জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ২০১৬ সালের নভেম্বরে এইউএসটির ট্রেজারার কাজী শরিফুল আলমের অফিস পিওন হিসেবে চাকরি পান। কয়েক মাস পর জানতে পারেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা ও পরীক্ষার টেন্ডার পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয়। ট্রেজারার শরিফুল আলম পরীক্ষা কমিটিতে থাকায় তাকে প্রশ্ন ছাপার বিভিন্ন কাজে নেওয়া হতো। ফলে প্রায় নিয়মিতই তিনি আশুলিয়ায় আহছানিয়া মিশনের ছাপাখানায় যেতেন। নজরদারি ও নিরাপত্তা না থাকায় তিনি লুকিয়ে প্রশ্ন নিয়ে বের হতেন। তাকে সহযোগিতা করতেন এইউএসটির টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান এবং ল্যাব সহকারী পারভেজ মিয়া। এভাবে তিনি পাঁচ-ছয়বার প্রশ্ন ছাপাখানা থেকে নিয়ে এসেছেন। তাদের সঙ্গে শ্যামল নামে একজন থাকত। এ ছাড়া এইউএসটির এলডিসি হারুনুর রশিদ এবং নিজের ভগ্নিপতি মুবিন উদ্দিনকেও প্রশ্ন এনে দিয়েছেন।

স্বীকারোক্তিতে দেলোয়ার আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরীক্ষার টেন্ডারগুলো আনতেন বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর। তিনিই সব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রতিবার প্রশ্ন ছাপার পর দুই সেট তিনি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতেন। দেলোয়ার নিজেও অনেকবার তার ব্যাগে প্রশ্ন ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কোনো প্রশ্ন বা শব্দ করলে চাকরি খেয়ে ফেলবেন বলে দেলোয়ারকে হুমকি দিয়েছিলেন নিখিল রঞ্জন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

এক-তৃতীয়াংশ ইহুদি-আমেরিকান কিশোর হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল

দখিনের সময় ডেস্ক: এক-তৃতীয়াংশের বেশি আমেরিকান-ইহুদি কিশোর (১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী) 'আমি হামাসের সাথে সহানুভূতিসম্পন্ন'- এমন বক্তব্যের সাথে একমত। ইসরাইলের একটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে...

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

Recent Comments