দখিনের সময় ডেস্ক:
ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কাতারে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঘনবসতির এই শহরটির ঝুঁকি কমাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি। আর্থ অবজারভেটরি সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা,এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। যা বড় ধরণের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকা শহরে। খবর সূত্র: বিবিসি।
সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাইকার ২০০৯ সালে যৌথ এক জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হলে, শহরের ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে এবং এক লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের সময় এই অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিবারই বড় কোন ভূমিকম্প হওয়ার পরই ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়, যা ধামাচাপা পড়ে থাকে বড় ধরণের আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগ পর্যন্ত। পুরানো ঢাকার সরু অলিগলির দুই পাশে গেলে দেখা যাবে এখনও গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভবন। সর্বোচ্চ তিন তলা গাঁথুনি যে ভবনটির, সেখানে নির্দ্বিধায় তোলা হচ্ছে ৫ তলা/ ৬ তলা। পুরানো ঢাকায় মুখোমুখি দুটো ভবনের মাঝে আকাশ দেখার জো নেই। কারোই ভবনের নীচে রাস্তায় ঠাঁই নেয়ার জায়গাটুকু নেই। পুরানো ঢাকার বাসিন্দারা তাই ভূমিকম্পের সময় ভয়ে থাকেন, কখন না ভবনটি তাদের ওপরেই ধসে পড়ে। এতো অল্প জায়গায় এমন বহুতল ভবন ভূমিকম্প বা অন্য যেকোনো দুর্যোগের ক্ষেত্রে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আক্তার জানিয়েছেন, সাধারণত প্রতি ১০০ বছর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। সবশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। সে হিসেবে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। শত বছরের পুরানো ভবনে এখনও মানুষ বাস করছে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোন বাস্তবায়ন নেই।