দখিনের সময় ডেস্ক:
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) প্রার্থীদের জয়ের হার বাড়ছে। আগের ধাপগুলোতেও প্রায় সমানসংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে জয় পেলেও পঞ্চম ধাপে নৌকাকে পেছনে ফেলেছেন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা। এই ধাপে নৌকার চেয়ে বেশি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র ৩৪৬, আওয়ামী লীগ ৩৪১
গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে ৭০৮ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, নৌকা জয়ী হয়েছে ৩৪১ ইউপিতে, স্বতন্ত্র ৩৪৬টিতে, জাতীয় পার্টি ২টিতে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২টিতে এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া ১৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ফল ঘোঘণা হয়নি। আদালত ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশে ২টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়।
ইসির তথ্য অনুসারে, প্রথম ধাপে গত ২১ জুনের ভোটে ২০৪টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪৮ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ১৬০টি ইউপির মধ্যে নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত হন ১১৯ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ২১ জুনের ভোটে ৪৯ জন এবং ২০ সেপ্টেম্বর জয় পান ৩৬ জন। সব মিলিয়ে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের ২৬৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৮৫ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ৩৩০টিতেই জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা ৪৮৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
তৃতীয় ধাপের ৯৯২টি ইউপি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে ৪৪৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ৫২৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৪৪৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ থাপে অনুষ্ঠিত ৮৩৬টি ইউপির মধ্যে ৩৯০টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ৩৯৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন; তাদের মধ্যে ৪৮ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ৭, ইসলামী আন্দোলন ২ এবং জাকের পার্টি ১ ইউপিতে হয় জয়লাভ করে। কিছু ইউপির অনানুষ্ঠানিক ফলাফল স্থগিত হওয়ায় সেগুলোর ফল ঘোষণা করা হয়নি।
পঞ্চম ৫ ধাপে মোট ৩ হাজার ৭৩৪টি ইউপির অনানুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৫ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এবং ১ হাজার ৫৯৭টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বাকিগুলোতে অন্য দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি ইউপির ফল অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে।
আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপে ২১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সপ্তম ধাপে ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। অষ্টম ধাপে (শেষ ধাপে) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আটটি ইউপিতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩, ১৯৮৮, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০৩, ২০১১ ও ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচন হয়। এবার হচ্ছে দশম ইউপি নির্বাচন। এর মধ্যে নবম ও দশম ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে দলীয় প্রতীকে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে যিনি জনপ্রিয়, তিনিও নমিনেশন পান না। এটা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটা একটি কারণ। এবারের নির্বাচন ছিল সহিংস। তাই স্থানীয় পর্যায়ে যারা আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছেন, তারাই জয়ী হয়েছেন।