Home শীর্ষ খবর টিকা কার্ড নিয়ে জটিলতা, বিদেশগামীদের জিম্মি করে কোটি টাকার বাণিজ্য

টিকা কার্ড নিয়ে জটিলতা, বিদেশগামীদের জিম্মি করে কোটি টাকার বাণিজ্য

দখিনের সময় ডেস্ক:

দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় এক বছর। কিন্তু এখনো কোভিড সনদ ও টিকা কার্ড নিয়ে জটিলতা বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রীরা এ ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়ছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশগামীদের জিম্মি করে মাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

এ চক্রে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগে কর্মরত আউটসোর্সিংয়ের কিছু কর্মী, নিরাপত্তাকর্মী ও তাদের সহযোগী। এসব কারণে টিকার তথ্যে নানা গরমিল তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টিকাগ্রহীতার তথ্য সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তা-ঘাটে এখন চলছে কোভিড টিকার সনদ বেচাকেনা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশগামীদের বেশিরভাগই স্বল্পশিক্ষিত। বিদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তারা অনেকাংশে রিক্রুটিং এজেন্সির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে বিদেশে যেতে হলে কোভিড নেগেটিভ সনদ ও টিকা পেয়েছেন এমন কার্ড থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখানেই শুরু জটিলতার। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব বিদেশগামী যথাসময়ে তাদের টিকা সনদ এবং কোভিড সনদ হাতে পান না। এটি ছাড়া বিদেশে যাওয়াও সম্ভব নয়।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, সনদ পরিবর্তনের কাজ করেন মূলত এমআইএসে কর্মরত ডেটা এন্টি অপারেটররা। তবে তারা সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তাদের হয়েই এ যোগাযোগ রক্ষা করেন এমআইএসের দুই গাড়িচালক ও নিরাপত্তাকর্মীরা। গাড়িচালক দুজন পদস্থ কর্মকর্তাদের গাড়ি চালান বলে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। দ্রুত সময়ে চাহিদামতো টিকা সনদ বা কোভিড নেগেটিভ সনদ পেতে ব্যয় করতে হয় ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এভাবেই প্রতিমাসে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

এমআইএসে কর্মরত দুজন চিকিৎসক বলেন,  ডেটা এন্টি অপারেটরদের কয়েকজন সারাদেশকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে নিয়েছেন। কয়েকটি জেলা নিয়ে এসব জোন গঠিত। যিনি যে জোনের দায়িত্বে, সেই জোনের অন্তর্গত জেলাগুলোর সব কাজ তিনিই করেন এবং টাকাও তিনি পান। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেশ মোটা অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছেন। এমনকি তারা কথায় কথায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।

জানা গেছে, প্রবাসী শ্রমিকদের টিকা পেতে ‘আমি প্রবাসী’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। আবেদনকারীর তথ্য যাচাইসাপেক্ষে সেগুলো আইসিটি বিভাগের ‘সুরক্ষা’ টিমে পাঠালে হোয়াইটলিস্টিং করা হয়। এর পর প্রবাসীরা সুরক্ষা নিবন্ধন করতে পারে। কিন্তু জটিলতার কারণে লিস্টিং করতে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আবার নিবন্ধনের পর মেসেজ পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। টিকা পেতে দীর্ঘসূত্রতা এবং ফাইজার ও মর্ডানার টিকা সব জায়গায় না পাওয়ায় অনৈতিকভাবে সনদ পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন প্রবাসীরা। এদিকে টিকা গ্রহণ, মেজেস প্রদান ও টিকাসংক্রান্ত তথ্য হালনাগাদ করতে প্রতিটি টিকাকেন্দ্রের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড সরবরাহ করা হয়, যা অননুমোদিত ব্যক্তির কাছে চলে যায়। ফলে শুরু হয় টাকার বিনিময়ে টিকাসংক্রান্ত নানা অনিয়ম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস কার্যালয়ে সরেজমিন থেকে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিড সনদ বা টিকা সনদ যথাসময়ে না পেলে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখায় যান। কিন্তু সেখান থেকে সমস্যার সমাধান পেতে অনেক সময় লেগে যায়। সেখান থেকে আইসিটি বিভাগে পাঠানো হয়, আবার আসতে হয়। এসব করতে যেমন হয়রানি হয় তেমনি সমস্যা সমাধানে কোনো কূলকিনারা করা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে অধিদপ্তরের নিরাপত্তায় কর্মরত সদস্যরা এবং নিজেদের অধিদপ্তরের কর্মচারী হিসেবে পরিচয়দানকারীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তাদের চাহিদামতো টাকা দিতে পারলেই চাহিদা অনুযায়ী কোভিড নেগেটিভ সনদ ও টিকা সনদ মিলে যায় সহজেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments