Home বিশেষ প্রতিবেদন তিন হাজার কোটি টাকা কোথায়?

তিন হাজার কোটি টাকা কোথায়?

দখিনের সময় ডেস্ক:

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেওয়া প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার কোন হদিস মিলছে না। এ টাকা কোথায়, কার কাছে, কীভাবে আছে তার গতিপথ শনাক্ত করা যায়নি গত ছয় বছরেও।

অর্থের গতিপথ চিহ্নিত না হওয়ায় মামলা থাকা সত্ত্বেও চার্জশিট দাখিলের জন্য নির্দিষ্ট করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে দীর্ঘ সময়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করার মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি।

অন্যদিকে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধারে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে অর্থঋণ আদালতে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তির অগ্রগতিও কম। আদালতের বাইরে আপস-মীমাংসার ভিত্তিতে খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়েও কোনো গতি নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুদকের কাজ অর্থ আত্মসাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সংস্থাটি অর্থের গতিপথ শনাক্ত করার দায়িত্ব নিয়ে এ সংক্রান্ত মামলার তদন্ত দীর্ঘসূত্রতায় ফেলেছে। হাইকোর্ট থেকেও এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে।

সূত্র জানায়, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদকে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনেই অর্থের গতিপথ শনাক্তের অনেক উপাদান ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু গতিপথ চিহ্নিত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে মামলাগুলোর ইতি টানছে না দুদক।

এদিকে, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে বলে গত বছর আদালতে দাখিল করা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল দুদক। কিন্তু উদ্ধার হওয়া এ অর্থ সত্যিই সরকারি কোষগারে জমা হয়েছে কিনা সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ উদ্ধার করা এ অর্থ কোথায় কীভাবে আছে সেটি সম্পর্কে জানে খোদ বেসিক ব্যাংকই। আবার এ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও জানার কথা। কারণ সরকারের সব অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ অর্থ আদৌ সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বলতে পারেননি।

সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর জামিনসংক্রান্ত একটি মামলার লিখিত রায় প্রকাশিত হয়। এতে আদালত বলেন, কমিশন (দুদক) ফলো দ্য মানি অনুসরণ করে তদন্তের যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাতে আদালতের বলতে কোনো সংকোচ নেই যে, কমিশন বর্তমান মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে ভুল পথ অনুসরণ করেছে এবং করছে। এ বিষয়ে আদালতের সুচিন্তিত অভিমত হলো- উপরোক্ত অপরাধ প্রমাণে আত্মসাৎকৃত অর্থের গতিপথ শনাক্ত করা আদৌ কোনো অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলক শর্ত হতে পারে না। কমিশনের দায়িত্ব দুর্নীতি চিহ্নিত করা এবং অপরাধীদের আইন ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেসিক ব্যাংকের যে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটা তো অদাবিকৃত কোনো টাকা নয়। তাই এ টাকা উদ্ধার হলে তা সরকারি কোষাগারে জমা হলেও তা বেসিক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ক্রেডিট হতো। কিন্তু আমার জানামতে এ ধরনের টাকা জমা হয়েছে বলে শুনিনি। তা ছাড়া ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকাও অনেক বড় অ্যামাউন্ট।

বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় ১২০ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। মামলা দায়েরের পর ৬ বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি দুদকের দায়িত্বশীল কেউ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

আপনাদের নেত্রী আর কখনো দেশে ফিরবেন না:  মাওলানা রফিকুল ইসলাম

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রায় সময় বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা শুনি, উনি (শেখ হাসিনা) নাকি...

Recent Comments