Home রাজনীতি পুনর্গঠন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আ.লীগের সব কমিটি,  অবসান হবে ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতির

পুনর্গঠন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ আ.লীগের সব কমিটি,  অবসান হবে ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতির

দখিনের সময় ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ এসেছে দলের হাইকমান্ড থেকে। তাই এবার ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি দূর করার উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্র। পুনর্গঠন করা হচ্ছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর সব কমিটি। এমনকি বিগত সময়ে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করেছেন, সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

স্নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে অবস্থা হযবরল। নেই চেইন অব কমান্ড। দীর্ঘদিন ধরে একই ব্যক্তি ঘুরেফিরে দলের দায়িত্বে আসছেন। অনেক জায়গায় তো কমিটিই নেই। দলের চেয়ে ব্যক্তির প্রাধান্য বেশি। নাসিক নির্বাচনের পর উলটপালট হয়েছে অনেক কিছু।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুই ধারায় বিভক্ত। প্রায় এক যুগ ধরে নানা ইস্যুতে নিয়মিতই আলোচনা-সমালোচনার শিরোনাম হচ্ছে গ্রুপ দুটি। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করছেন না; জড়াচ্ছেন প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে। অনেক সময় সেই দ্বন্দ্ব শিষ্টাচারকেও ছাড়িয়ে যায়। কেন্দ্র থেকে বারবার হুশিয়ারি দিলেও আমলে নেন না কেউ।

কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানান, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের বেহাল চিত্রের চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (নাসিক)। দল থেকে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলেও অন্য একটি গ্রুপ তার পক্ষে কাজ করেনি। বরঞ্চ তারা নীরবে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাশালী এক নেতার নিজের কেন্দ্রে নৌকার পরাজয়। অথচ দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য বিভেদ ভুলে দলের সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য লাগাতার নির্দেশনা দিলেও অনেকে তা কর্ণপাত করেননি। এটা বুঝতে পেরে নাসিক নির্বাচনের মধ্যেই বিলুপ্ত করা হয় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। নির্বাচনের দিন ভোটের মাঠে না পাওয়ায় ওইদিন রাতেই আড়াইহাজার থানা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সব কমিটি বিলুপ্তি করা হয়। একই অভিযোগে এর একদিন পর মহানগর শ্রমিক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে দিনের পর দিন যেসব কমিটি চলছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সেসব কমিটিও ভেঙে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে দলের প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল নেতাদের নতুন কমিটিতে আনা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া যারা দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন, অপরাধের মাত্রা বুঝে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অনেকে বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রাজনীতিতে একক কর্তৃত্ব আর থাকবে না। বিলুপ্ত হওয়া সহযোগী সংগঠনের নেতারা ইতিপূর্বে যে বিশেষ নেতার নির্দেশে চলত তার বলয় থেকেও বের করে আনার ইঙ্গিত পাচ্ছি।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে প্রায় ২৫ বছর ধরে কোনো কোনো ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির বয়সও প্রায় ৯ বছর। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৩ সালে। সে হিসাবে ওই কমিটির বয়স ১৯ বছর। ওই কমিটির সহসভাপতি নূর হোসেন সাত খুন মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি হয়ে বর্তমানে জেলে আছেন। এ কমিটির ৩০ শতাংশ নেতাই ইতোমধ্যে মারা গেছে বলে জানা যায়। রূপগঞ্জ থানা কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগ।

জেলা, বন্দর, ফতুল্লার কমিটির মেয়াদ থাকলেও সেখানকার রাজনীতিতেও পরিবর্তনের আভাস। অন্যদিকে দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষকলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের বিষয়ে একই নির্দেশনা আসছে।

 নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই আমাদের সময়কে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচন দেখভাল করতে নারায়ণগঞ্জে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই কমিটিগুলো বাতিল করা হয়েছে।’ নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা বলেন, ‘সামনে কেন্দ্রীয় কমিটিরও কাউন্সিল হবে। তার আগে এসব বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ তাদের নিয়েই কমিটি করার সিদ্ধান্ত হবে এবার। দল করতে হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে হবে প্রকৃতভাবে। শেখ হাসিনার কর্মী হতে হবে।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে বিভিন্ন থানা কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটাই করা হবে। আসলে এসব কমিটি অনেক আগে হয়েছে। এখন সময় এসেছে নতুন কমিটি গঠনের। যে কোনো কারণেই হোক কমিটিগুলো করা হয়নি। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসে কেন্দ্রীয় নেতারা দেখেছেন যে, একপেশে কমিটি করলে কী হয়। এখন দল সার্বিক দিক বিবেচনা করে যা করার সেটাই করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, সাংগঠনিক বিধি অনুযাযী নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে যা থাকার দরকার তার কিছুই সেখানে নেই। যা আছে তা নামসর্বস্ব। এই অচলায়তন ভাঙতে হবে। সেখানে ওয়ার্ড থেকে জেলা ও মহানগর পর্যন্ত দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে দলকে সাজানো হবে। শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এ বিষয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক: সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...

না ভোট ফিরিয়ে আনার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

দখিনের সময় ডেস্ক: সরাসরি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়া, না ভোট ফিরিয়ে আনা ও অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ...

সুযোগ পেলে গলা চেপে ধরবে আ.লীগ: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: গণহত্যার জন্য বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও, সুযোগ পেলে আবারও তারা মানুষের গলা চেপে ধরবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

Recent Comments