দখিনের সময় ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামী লীগ ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়া কোনো সরকার তা করেনি, বরং প্রাণহানি ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারে আসে।
আজ শনিবার চারদিনব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্বে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বরেন, মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর আমি ২০০১ সালে করেছিলাম। এ ছাড়া যদি আমরা বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, কোনোদিনও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। ৭৫ সাল থেকে একের পর এক রক্তপাত হয়েছে, খুন হয়েছে, প্রতিবারই কোনো না কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর আমরা সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস দেখি, সেই ৭১ থেকে ৭৫ সাল এবং ৭৫’র ১৫ আগস্টের চরম আঘাত। তারপরে অন্ধকারের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তার স্বাধীনতার চেতনা, জয় বাংলা স্লোগান, ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ, ছবি নিষিদ্ধ, ২১ বছর এভাবে বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস পদদলিত হয় এবং অন্য ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করা হয়। ইতিহাস কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আর সত্যের জয় হয়। এটা কেউ কখনো বাধা দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে না। আজ সেটাই হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামী দিনের পথ দেখেছিলেন তার ঐতিহাসিক ভাষণের সাহায্যে। রেসকোর্স ময়দানে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ শুরু করে। রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি, পিলখানাসহ একই সঙ্গে সেই ধানমন্ডির বাড়ি। জাতির পিতা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছিলেন। এখনকার পিলখানা হেডকোয়ার্টার পিপিআর এই ফাঁড়ি থেকে তিনি এ ঘোষণা প্রচার করেছিলেন। সেই স্বাধীনতার ঘোষণা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনের মাধ্যমে সংগ্রাম পরিষদের হাতে ওই ভোররাতের দিকে বার্তা পৌঁছে দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ব্যাপক প্রচার শুরু করে সেদিন থেকে। ২৬ মার্চ থেকে এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তারা নিয়ে যায় পাকিস্তানে এবং বন্দি করে রাখে। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেয়। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে বাংলাদেশের ফিরে আসেন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে।
আওয়ামী লীগের শুরু করা উন্নয়ন কাজ ২০০১ সালে থমকে গিয়েছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, যে উন্নয়নের যাত্রা শুরু করে গিয়েছিলাম। তাও দুর্ভাগ্যবশত ২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা থামিয়ে দিয়েছিল। আবারও আমরা একটা অন্ধকার যুগে প্রবেশ করি। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। সন্ত্রাস, বাংলা ভাই! বাংলাদেশের মানুষের ওপর একটা জুলুম-অত্যাচার এসেছিল। সব উন্নয়নের, কল্যাণমূলক কাজগুলো বন্ধ হয়েছিল। যার ফলে আরেক ধরনের বিভাজন তৈরি হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ থেমে থাকেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদ করেছে। যার ফলে আমরা ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় আসি। নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসি।
দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এদেশের জনগণের প্রতি তারা বারবার ভোট দিয়ে আমাদের তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই আজকে আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পেয়েছি, ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ পেয়েছি। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের অনুষ্ঠান সীমিত আকারে করতে হয়েছে। আমরা ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়ে এসেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আর কেউ খেলতে পারবে না। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাবে। আজকে যে প্রজন্ম তাদের কাছে আমার এটাই থাকবে আহ্বান, আমরা কিন্তু পরিকল্পনা দিয়ে গেছি। যেমন ২০২১ পর্যন্ত আমরা পরিকল্পনা দিয়েছিলাম, সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করেছি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছি, দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। বাংলাদেশে কেউ যেন অবহেলা করতে না পারে, বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে, শিক্ষায়-দীক্ষায় জ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে, বিজ্ঞানে সবদিক থেকে যেন আমরা এগিয়ে থাকতে পারি। দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে সক্ষম হয়েছি, একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।