Home বিশেষ প্রতিবেদন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কঠিন ব্রত, দেখা যাক কী হয়!

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কঠিন ব্রত, দেখা যাক কী হয়!

আলম রায়হান:

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগামী জন্মদিনের আগেই ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করা হবে।’  দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই লক্ষের কথা জানিয়েছেন  নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি আরা বলেছেন, এই কাজে কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বিরাজমান বাস্তবতায় এ এক কঠিন ব্রত।

এদিকে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ৭ এপ্রিল আলাপ কালে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী নদী বাঁচাতে   টেকনিকাল ও কৌশলগত পরিকল্পনার বিষয়ে জানিয়েছেন। যা বিরাজমান কঠিন বাস্তবতায়ও কার্যকর বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান  বলেন, দূষণমুক্ত করার কাজে যারা বাধা দেবেন, অসহযোগিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো। মেয়র, ওয়াসা, পৌরসভা, ইউনিয়ন কাউন্সিল, বিভিন্ন কোম্পানি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার যে ব্যবস্থা তা আমি নেব। আমি জনমত গড়ে তুলবো। জনতার আদালতে তাদের আমি তুলে ধরবো।

সবাই যা জানেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীও তাই জানেন। তা হচ্ছে, ঢাকার আশেপাশের প্রায় ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে সব নদী দূষিত। খালগুলো হয়ে গেছে নর্দমা। নদীগুলোর দূষিত পানির কারণে রাজধানীর লোকজন নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আরও অনেকে আক্রান্ত হবেন। এখান থেকে মুক্তির যে পদ সেই পদে কেউ আগাচ্ছে না। দূষণের জন্য তেমন কোনো মামলা হচ্ছে না। এ বক্তব্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের। এবার তিনি রক্ষা করতে চান!

প্রশ্ন হচ্ছে, নদী দূষিত মুক্ত করা এবং নর্দমায় পরিণত হওয়া খালগুলো  কিভাবে বাঁচাবেন ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী? কারণ তিনি যে সংস্থার চেয়ারম্যান সেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তো শুধু সুপারিশ করতে পারে। বাস্তবায়নের ক্ষমতা কমিশনের নেই। তা হলে ঘোষিত লক্ষ্যে কি ভাবে পৌছাবেন চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী?

এ প্রসঙ্গে কমিশন চেয়ারম্যানের বক্তব হচ্ছে, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে এটা আমি স্বীকার করছি। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কাজ করা যায়। যেমন, চাঁদপুরে মেঘনাতে যেখানে ইলিশের অভয়ারণ্য সেখানে প্রায় ৩০০ এর মতো ড্রেজার, বাল্কহেড ও নৌ-যান নিয়ে বালু উত্তোলন করা হতো। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম তাদের উৎখাত করতে হবে। তাদের ২ দিন লেগেছে উৎখাত করতে। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকেই পালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, নদী রক্ষায় কেউ বাধা দিতে পারবে না । আমাদের কাজে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী (নারী) বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এখনো তিনি বাধা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং বড় ধরনের সফলতা পেয়েছি। আমরা যে কাজ করেছি গত ১৯ বছরে এমন কাজ কেউ করতে পারেননি।

আশার আলো হচ্ছে এখানেই! অনেকেই মনে করেন, ‘প্রথম রাতে বিড়াল মারা’ বলে যে প্রবচন আছে তা জাতিকে সফলভাবে জানান দিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। মেঘনা নদী কেন্দ্রিক যে তান্ডব এতোদিন বন্ধ করা তো দূরের কথা, এদিকে দায়িত্ব প্রাপ্তরা তেমনভাবে তাকিয়েছেন বলেও জানা যায়নি। কিন্তু এদিকে কেবল তাকানো নয়, কি এক যাদু বলে কাজটি করেদিলো জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। আর এখানেই থেমে যায়নি বিষয়টি। বরং, এর নেপথ্যের ‘প্রানভোমরা’ নিয়েও টানাটানি হচ্ছে বলে জানাগেছে।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন,  মেঘনায় সামাজিক, আর্থিক ও পরিবেশগত কী ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করতে আমরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে। ১৪ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা এসব তথ্য দুদককে জানাবো। কারা এসবের সঙ্গে জড়িত, কারা ডিও লেটার দিয়ে মদদ দিয়েছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনেকেই মনে করেন, মেঘনা নদীতে তান্ডব বন্ধে যে সাফল্যের উদাহর সৃষ্টি হয়েছে এবং সাফল্য ধরে রাখার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার ভিত্তি অত্যন্ত গভীরে। ফলে,  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগামী জন্মদিনের আগেই ঢাকার আশেপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত করার কঠিন ব্রত সফল করা সম্ভব হবে বলে অভিজ্ঞ মহলও মনে করেন। আর দেশবাসীতো কামনা করে কারোমনোবাক্যে।  আর এমন একটি বিশাল কাজের জন্য এক বছর তেমন বেশী কোন সময় নয়। দেখা যাক কী হয়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

হোয়াটসঅ্যাপে কেউ আপনাকে ব্লক করলে বুঝবেন যেভাবে

দখিনের সময় ডেস্ক: তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য কোম্পানি সময়ে সময়ে আপডেট এনে থাকে হোয়াটসঅ্যাপ। এতে অন্যান্য ফিচারের...

যে কারণে পাবলিক চার্জিং স্টেশনে ফোন চার্জ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

দখিনের সময় ডেস্ক: সম্প্রতি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছে ভারত সরকার। এতে বলা হয়, সাধারণ মানুষ যেন চার্জিং পোর্ট ব্যবহার না করেন। অনেকেই বিমানবন্দর,...

ফোন পানিতে পড়ে গেলে করণীয়

দখিনের সময় ডেস্ক: দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন কাজে আমরা ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। তবে একটু অসতর্ক থাকলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।...

মুড সুইং কেন হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: মুড সুইং শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই আপনি পরিচিত? এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি জীবনে কখনো না কখনো এর ভেতর দিয়ে যাননি।...

Recent Comments