একদিকে চলছে পাকবাহিনীর মুহুমুহু গোলা বর্ষণ, অপর দিকে বরিশাল শহর ছেড়ে মানুষ ছুটছে রুদ্ধশ্বাসে। সন্ধ্যার দিকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ধীরলয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে হানাদারবাহিনী। এর আগে বেলা একটার দিকে প্রতিটি প্রতিরোধ কেন্দ্র থেকে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। ফলে বেলা দুইটার মধ্যেই বরিশালে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে।
মুক্তিযোদ্ধাদের শহর থেকে পাকবাহিনী অবস্থান ছিলো তিন থেকে চার মাইল দূরে। এ হিসেবে ধীরে আগালেও সর্বোচ্চ তিনটার মধ্যে বরিশাল শহরে ঢুকতে পারতো পাক বাহিনী। কিন্তু তা করেনি। বরং দিনের আলোয় চালিয়েছে গণহত্যা। আর সন্ধ্যায় স্বল্প আলোয় অতি সন্তর্পনে ঢুকেছে শহরে। গৃহস্তের বাড়িতে ধুর্ত শিয়াল যেভাবে ঢোকে!
পাকবাহিনী জলে-স্থলে ও আকাশ পথে বরিশাল অভিযান চালায়। তাদের ধারণা ছিল বরিশাল ও পটুয়াখালী মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তঘাঁটি। তাই তারা শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে বরিশালে আক্রমণ করেছে। সকাল ১১ টার দিকে পাকিস্তান নৌবাহিনী ঝুনাহার আক্রমণ করে। সায়েস্তাবাদ নদী হতে ঝুনাহার হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে যেতে হয়। আর এই নদীর তীরে বরিশাল শহর। ঝুনাহারের পশ্চিমে সায়েস্তাবাদ এবং পূর্বদিকে চরমোনাই ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ও তালতলী।
ঝুনাহারের পশ্চিম পাড়ে হবিনগর, পূর্ব পাড়ে রাজাপুরে এবং দক্ষিণ পাড়ে পোটকার চরে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। একদল মুক্তিযোদ্ধা হবিনগরে ওয়াজেদ হাওলাদারের বাড়ি, একদল তালতলীর কাছে নাজিরবাড়ির স্কুল এবং একদল বেলতলায় অবস্থান নেয়। লে. ইমাম আলী মেহেদী, লেঃ নাসির, ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডে ছিলেন।
প্রথমে গানবোট থেকে সায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের হবিনগর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। বলাবাহুল্য, এই প্রতিরোধ প্রয়াস ছিলো হায়নার গুলতি ব্যবহারের মতো। গানবোট ঘায়েল করার মতো তাদের কোন অস্ত্র ছিল না মুক্তিযোদ্ধাদেও কাছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পাক বাহিনীর গোলার আঘাতে বেরিকেট হিসেবে ব্যবহৃত স্টীমার ইরানী ও মাজভী ডুবে যায়। সেই জাহাজ দুটি কখনো আর তোলা হয়নি। সেখানে চর পড়েছে।
(কাল ২০তম পর্ব)