পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমনে দুপুরের আগেই বরিশাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে। এদিকে গানবোট থেকে একের পর এক সেল নিক্ষেপ করতে থাকে হানাদার বাহিনী। বলা হয়, চরবাড়িয়া-শায়েস্তাবাদে অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কেবল এই সেলের আঘাতে।
তখন কেউ মাঠে, কেউ ঘরে। কোন কিছু বুঝতে না বুঝতেই একএকটি গোলার আঘাতে একাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, প্রাণ গেছে গবাদী পশুরও। সাংবাদিক গোপাল সরকারের মতে, গানবোট থেকে অন্তত একশ’ থেকে দেড়শ’ সেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। বিকট শব্দের এ সেলের কারণে গোটা এলাকা কেঁপেকেঁপে উঠেছে। শহরও তখন কেঁপেছে। পাকবাহিনী প্রবেশের আগেই শহরের মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পুরো শহর খালি হয়ে যায়। গোপাল সরকারের উচ্চারণ, ‘শহরের রাস্তায় একটি কুকুরও ছিলো না।’
একের পর এক মর্টার সেলে বারবার কেপে ওঠা এবং পাক বাহিনী প্রবেশের আশংকায় বরিশাল শহর ছেড়ে সাধারণ মানুষ ছুটেছে গ্রামের দিকে। অধিকতর গ্রামের দিকে ছুটেছে শহরতীলর মানুষ। আর রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সিংহভাগই ধরেছেন ভারতে যাবার পথ। এ ক্ষেত্রে প্রধান গন্তব্য ছিলো নবগ্রাম রোড হয়ে ঝালকাঠি। কেউ গেছেন সাগরদী হয়ে ঝালকাঠির দিকে। লক্ষ্য ভারত।
কিন্তু ভারত মুখী এই জন¯্রােত ধারা মোটেই নিরাপদ ছিলো না। অনেকে লক্ষ্যে পৌছাতে ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়েছেন। কেউ আবার হতাশ হয়েছেন লক্ষ্যে পৌছানার পরও। অনেকের কাছেনই ভারত যাত্রা পরিণত হয় এক নরক থেকে আর এক নরকে পৌছানো।
পথে পথে দুর্ভেগ এবং রাজাকারের হাতে পড়ার ভয়। এদিকে এক শ্রেনীর লোক ছিলো, যারা সমানভাবে পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে ছিলো। তারা ভারতমূকী জন¯্রােতকে ভালো চোখে দেখতো না। আর সবচেয়ে বড় আতংক ছিলো রাজাকার বাহিনী। এরা ছিলো নদীতে হাঙ্গগের মতো। রাজারকারদের মূল্য লক্ষ ছিলো টাকা-পয়সা ও স্বর্নের দিকে। আর যুবতী মেয়ে হলে তাদেরকে ধরেনিয়েতো।