দখিনের সময় ডেস্ক:
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল যান চলাচলের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নতুন জটিলতায় পেছাচ্ছে কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন। করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংহাই বন্দর থেকে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তাই জাহাজে করে প্রয়োজনীয় এসব মালামাল ও যন্ত্রপাতি আনা যাচ্ছে না, যার প্রভাব পড়েছে টানেলের নির্মাণকাজে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় ৫৭ লাখ ৪০ হাজার মানুষের শহর চট্টগ্রামকে। আর এই শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে বঙ্গোপসাগরে মিশে যাওয়া বৃহৎ নদী কর্ণফুলী। যার পূর্বপাশে শিল্পাঞ্চল, পশ্চিমে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং মূল নগরী। তাই যাতায়াতের সময় কমিয়ে আনা, যানজট কমানো এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড কোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হতে উদ্যোগ নেওয়া হয় ওই নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ওই টানেলটি যান চলাচলের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলে দেওয়ার কথা। সে অনুযায়ী কাজও এগিয়েছে অনেক দূর। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে দেখা দিয়েছে নতুন জটিলতা- প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল আমদানিতে ছেদ এবং এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থছাড়ে সময় বাড়ানো নিয়ে সমস্যা। এ দুই কারণেই সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে স্বপ্নের টানেলটির উদ্বোধন পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চীনের অর্থায়নে দেশটির ঠিকাদারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ চলছে। মূলত চীনের সাংহাই শহর থেকে এ প্রকল্পের অনেক পণ্য ও উপকরণ আমদানি করা হয়। সেখানেই টানেলের মালামাল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংহাই বন্দর থেকে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তাই জাহাজে করে প্রয়োজনীয় এসব মালামাল ও যন্ত্রপাতি আনা যাচ্ছে না, যার প্রভাব পড়েছে টানেলের নির্মাণকাজে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) চিঠি দিয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছে।
তাদের দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না। গত মার্চ থেকে সাংহাই বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ উল্লেখ করে প্রকল্পের ঠিকাদার তাদের অসহায়ত্বের কথা জানায়। সে অনুযায়ী যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশয় প্রকাশ করে গত ৮ মে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। কাজ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সময়মতো শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়ার কথাও চিঠিতে তুলে ধরেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
একই চিঠিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণের টাকা ছাড়করণ নিয়ে সমস্যার কথাও জানানো হয়েছে। অর্থছাড়ের মেয়াদ বাড়াতে বলা হয়েছে। নতুবা প্রকল্পের কাজ প্রভাবিত হবে। দেশটির এক্সিম ব্যাংকের ঋণ ‘প্রাপ্তির সময়কাল’ আরও ছয় মাস যোগ করে ২০২৩ সালের ৬ মে পর্যন্ত বর্ধিতকরণের কথা জানিয়েছে। এ জন্য সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে দেশটির এক্সিম ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার অনুরোধ করেছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চীন তাদের ঋণের টাকা ছাড়করণের মেয়াদ না বাড়ালে প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য ইআরডির মাধ্যমে চিঠি দেওয়া জরুরি। যদি কোনোভাবেই চীন রাজি না হয়, সে ক্ষেত্রে সরকারি অর্থায়নে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ঋণ জটিলতা নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারিও এ সংক্রান্ত আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে সেতু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। তার আগে প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আলোচনা হয়।