দখিনের সময় ডেস্ক:
পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল, অনেকেই দেখেছেন। আগ্রার তাজমহল নির্মাণ করা হয় যমুনা নদীর দক্ষিণ তীরে। ১৬৩২ সালে শুরু হয়ে নির্মাণ সম্পন্ন হতে সময় লাগে ২২ বছর। পারস্য, ভারত ও অটোমান সাম্রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার কর্মী মিলিতভাবে এই স্থাপত্য নির্মাণ করেন।
মার্বেলে নির্মিত তাজমহল নির্মাণের সময় এর দেওয়াল মূল্যবাল সব রত্ন দিয়ে খচিত ছিল। আলো পড়লে দেওয়াল যেন ঝলমল করে, সেজন্যই বসানো হয়েছিল রত্ন পাথর। কিন্তু তাজমহল অসংখ্যবার আক্রমণের শিকার করা হয়েছে। সেসময় এর অধিকাংশ মহামূল্যবান রত্ন লুট হয়ে যায়। তবে মারবেল পাথরের তাজমহল এখনও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বিশেষ করে পূর্ণিমা রাতে মহলের উজ্জ্বলতায় যেকেউ বিমোহিত হবে।
তাজমহলের মূল ফটক দিয়ে ঢোকার সময় মহলকে বিশাল ও ফ্রেমে আবদ্ধ মনে হবে। কিন্তু যতই এগিয়ে যেতে থাকবেন তা আসলে ছোট হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যা চিন্তা করি তার উলটো ঘটবে। মূল মিনারের পাশের টাওয়ারগুলো আরেকটি নিখুঁত প্রতিসাম্যের বিভ্রম সৃষ্টি করে। এগুলো পুরোপুরি সোজা মনে হলেও আসলে বাইরের দিকে কিছুটা বাঁকানো। এই বাঁকানো কিন্তু ভুল করে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে বানানো। ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে টাওয়ারগুলো যাতে মূল মিনারের ওপর ধসে সমাধিসৌধের ক্ষতি না করে, সেজন্য বাইরের দিকে হেলানো।
সম্রাট শাহজাহান ও সম্রাজ্ঞী মমতাজের ফাঁকা সমাধিসৌধ তাজমহলের সবচেয়ে উঁচু ফ্লোরে অবস্থিত। এই জায়গাটি প্রতিসম নয়। তবে আসল সমাধিগুলো একদম নিচ তালায় অবস্থিত, যেখানে কারও প্রবেশের অনুমতি নেই।
ইতিহাসে, শাহজাহান কখনোই চাননি, তার সমাধি তাজমহলে হোক। আসলে তাজকে প্রতিফলিত করবে, এমন আরেকটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কথা ছিল। নদীর অপর পাড়ে তাজমহলের প্রতিচ্ছবিরূপে কালো তাজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সম্রাটের। কিন্তু সেই নির্মাণকাজ কখনোই আলোর মুখ দেখেনি। তার আগেই শাহজাহানকে তার পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতাচ্যুত করে আমৃত্য কারাবন্দি রাখে। সম্রাট শাহজাহানের সমাধি নিচতালায় অবস্থিত। এই সমাধি একদমই সাদামাটা।
তাজমহলের দেয়ালে রয়েছে মনমুগ্ধকর জ্যামিতিক ও ফুলেল নকশা। এই নকশার মধ্যে ক্যালিগ্রাফি করা কুরআনের বাণীও রয়েছে। এই অক্ষরগুলো নকশা করেছিলেন আমানত খান। মার্বেলে খোদাই করা এই লেখার নিচে আরেকটি লেখাও পাওয়া যাবে। সেখানে বলা ‘তুচ্ছ মানুষ আমানত খান সিরাজীর লেখা’।
সাধারণ মানুষের চোখে তাজমহল দুর্দান্ত ও নিখুঁত এক স্থাপত্য। কিন্তু কয়েক বছর আগে শিক্ষাবিদ দিলীপ আহুজা একটি পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ করেন, তাজের মূল গম্বুজই নিখুঁত নয়। পরীক্ষাটি ছিল এমন— তাজের মূল গম্বুজের একটি ছবি মাঝামাঝি কেটে দুটি অংশ পরীক্ষা করে দেখা যায়, তা প্রতিসম নয়। ৫.৫ শতাংশ পর্যন্ত তা অপ্রতিসম। অনেকের বিশ্বাস, স্থপতি ইচ্ছাকৃতভাবে এই খুঁত রেখেছেন।