আলম রায়হান ও কাজী হাফিজুর রহমান ॥
বরিশাল সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বেপারী পেশায় ছিলেন নৌকার মাঝি। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ঘেরাও করে পাক-বাহিনীর অপারেশনের সময় টার্গেট গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় তার স্ত্রী, গুলিবিদ্ধ হয়ে তার এক বছরের শিশুপুত্র মারা যায় কয়েক ঘন্টা পর।
মুক্তিযুদ্ধের পর মানসিক ভারসাম্য হারা দারিদ্র পীড়িত এই মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুকালে তিন কন্যা রেখেগেছেন। তারা হচ্ছেন মোসা: সাফিয়া বেগম, মোসা: আনোয়ারা বেগম ও মোসা: ময়না বেগম। এই তিন কন্যার মধ্যে আনোয়ারা বেগম মারা গেছেন ২০ বছর পার হবার আগেই। এদিকে দারিদ্রের কশাঘাতে ৬৫ বছরে পৌছেই ৯৫ বছরের দশায় আছেন সাফিয়া বেগম। বাবার খুবই আদরের ছোট মেয়ের নাম দিয়েছিলেন ময়না। সেই ময়নার অবস্থা এখন কাকের মতো। দারিদ্র পীড়িত জীবন সংগ্রামে তিনি বড়ই ক্লান্ত। তবে পরাভব মানার নন। কারণ, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বেপারীর রক্ত ও আদর্শের উত্তরাধিকার। ২০১৪ সালে সরকার সুযোগ দেবার পর মোসা: ময়না বেগম বাবার স্বীকৃতির জন্য বিধিমোতাবেক আবেদন করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বেপারীর আনুষ্ঠাানিক স্বীকৃতি মেলেনি আজও। বৈষয়িক প্রাপ্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় দুইবারে মোট পাঁচশ’ টাকা পেয়েছেন। প্রাপ্তির খাতা এইখানেই বন্ধ। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় তার কন্যারা শুনেছিলেন, তাদের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে। এর সত্য মিথ্যা তারা জানেন না। তবে তারা কোন সাহায্যই পাননি। বরং পৈত্রিক জমি দখল করেছে কথিত দুই স্বজন। দখলদার নূরুল ইসলাম ও হাবিব সম্পর্কে মোহাম্মদ আলী বেপারীর ফুপাতো ভাই।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মো: আলী মাঝির স্বীকৃতির জন্য অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন আর এক মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক সরদার। সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে মাঝির সহযোদ্ধাদের প্রত্যয়ন পত্র। সহযোদ্ধাদের মধ্যে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন সুলতান মাস্টারের টো-আইসি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মজিদ তালুকদার, মো: মতিউর রহমান এবং ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ফজলুল হক সরদার। প্রায় ৪৩ বছর পর মো: আলী মাঝির সন্তানদের সন্ধান ঘটনাচক্রে পান সাবেক ছাত্র নেতা ও রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাহরিয়ার বাবু। তিনি বিষয়টি জানান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক সরদারকে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, মুক্তিযুদ্ধ শেষে মাঝির পেশা ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য গ্রাম ছেড়ে বরিশাল শহরে আসেন মোহাম্মদ আলী বেপারী। শুরু করেন ফুটপাথে তরকারী বিক্রি। কিন্তু বিশেষ সুবিধা হয়নি। এদিকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নেয় সম্পর্কে ফুপাতো ভাই নূরুল ইসলাম ও হাবিব। অভাব-অনটন আর হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৫/৬ বছর পর গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় মারাযান মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বেপারী। সে সময় ছিন্নমূল হয়ে যায় তার তিন কন্যা।
উল্লেখ্য, সুবেদার মেজর মজিবুল হক সরদার এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলার শুরুতেই এ ধারায় যোগদেন নৌকার মাঝি মোহাম্মদ আলী বেপারী। তবে যুদ্ধে তার অবদানকে অনেকগুণ ছাড়িয়ে গেছে মাঝি হিসেবে তাঁর পেশাগত দক্ষতা। তার অবদানে ঘটনাচক্রে বেঁচে জান ৬০/৭০ মুক্তিযোদ্ধা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী মাঝির দুই কন্যার সাথে আলাপ করছেন দৈনিক দখিনের সময় এর প্রতিনিধি
আলম রায়হান। ছবি: কাজী হাফিজুর রহমান
সুবেদার মেজর মজিবুল হক সরদারের উদ্যোগে বরিশাল সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নে ৭নং পশ্চিম শোলনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে সদস্য সংখ্যা দ্রুত ৬০/৭০ হয়ে যায়। এ অবস্থায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় ক্যাম্পটি শিবপাশার হাজী রজ্জব আলীর বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। বিশাল এই বাড়িতে স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু এটি ছিলো আসলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মৃত্যুকুপ!
কারণ, হাজী রজ্জব আলীর ছেলে জাফর খান ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষের লোক। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এই ক্যাম্প হামলার জন্য বরিশাল শহরে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন। এবং বড় অপারেশনের দিন-তারিখ নির্ধারিত হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর আসে, মেজর শাজাহান ওমর ভারত থেকে আসা অস্ত্র গ্রহণ করার জন্য বড়াকোটায় যেতে বলেছেন। তখন বৌসের হাট সংলগ্ন খাল দিয়ে ঝালকাঠি-সুবিদখালী রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল করতো। এই লঞ্চে করে অস্ত্র আনতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এ জন্য হাজী রজব আলীর বাড়ির ক্যাম্প থেকে মো: আলীর নৌকায় করে রাতে কয়েক ট্রিপে মুক্তিযোদ্ধারা লঞ্চে ওঠেন। এদিকে ঐদিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে হামলা চালায় সুসজ্জিত পাকবাহিনী। কিন্তু তখন ক্যাম্প ছিলো মুক্তিযোদ্ধা শূন্য। ফলে সেদিন ৬০/৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু পাকবাহিনীর হামলা থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তিযোদ্ধাদের পারাপার করা নৌকাটি।
একাধিক ট্রিপে মুক্তিযোদ্ধাদের লঞ্চে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরতে মাঝির দেরী হয়ে যায়। ভোরে মাঝির স্ত্রী স্বামীর জন্য ভাত নিয়ে এক বছরের শিশু পুত্রকে নিয়ে নৌকাঘাটে আসেন। তখন হাজী রজ্জব আলীর বাড়িতে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের চারদিক থেকে পাক বাহিনীর গোলাবর্ষণ চলছে। ভাত খাবার জন্য নৌকায় কুপি জালানো হয়। এই আলো লক্ষ গুলি ছোড়ে পাক বাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই মাঝির স্ত্রী নিহত হয়। আহত হয় একমাত্র পুত্র। অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে এই পুত্র মারা যায় কয়েক ঘন্টা পর।
সেদিন প্রাণে বেঁচে থাকলেও স্ত্রী-পুত্র হারানোর শোকে অনেকটাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকার মাঝি মো: আলী। বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় ৫শ’ টাকা পেলেও আর কিছুই পাননি মুক্তিযোদ্ধা মো: আলী মাঝি। এমনকি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মেলেনি আজও! নৌকার মাঝি মো: আলী বেপারীর তিন কন্যার জীবিত দুই কন্যা এখনো জীবন যুদ্ধে বিধ্বস্ত, দু’জনই বিধবা। তাদের দিন কাটে চরম দারিদ্রে। দুই কন্যার একজন বরিশাল সদর উপজেলা অফিসের সামনের ফুটপাথে চায়ের দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অপরজন নির্ভরশীল অটোচালক সন্তানের উপর।
দখিনের সময় ডেস্ক:
দেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা কিনতে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কুয়েতে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কুয়েত স্থানীয়...
দখিনের সময় ডেস্ক:
কারও কাছে ভিক্ষা করে দেশের মানুষ চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভিক্ষুক জাতির...
দখিনের সময় ডেস্ক:
দশ বছরের কম বয়সী ৩০ জন স্কুলছাত্রের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করেছেন ৩৩ বছরের শিক্ষক মো. আব্দুল ওয়াকেল। শিশুদের বলাৎকার করে তিনি মোবাইলে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে দুবাই শহরে সাড়ে বাইশ কোটি ডলারের সম্পদ কিনেছেন ৩৯৪ জন। তবে আরও বিভিন্ন তথ্যাদি...