Home আন্তর্জাতিক ভারতের নারীরা এত বেশি স্বামীর মার খায় কেন?

ভারতের নারীরা এত বেশি স্বামীর মার খায় কেন?

ডেস্ক রিপোর্ট:

খাবার নিয়ে ঝগড়ার জেরে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনের খবর ভারতে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। জানুয়ারিতে রাজধানী দিল্লির শহরতলীর নয়ডায় স্ত্রী রাতের খাবার দিতে অস্বীকার করায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী। ২০২১ সালের জুনে উত্তর প্রদেশে খাবারের সাথে সালাদ পরিবেশন না করায় স্ত্রীকে হত্যা করেছিল এক ব্যক্তি। এর চার মাস পরে বেঙ্গালুরুতে ভাজা মুরগি ঠিকভাবে রান্না না করায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা করে এক ব্যক্তি।
সকালের নাস্তায় লবণ বেশি দেওয়ায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে গত মাসে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পুলিশ। ওই দম্পতির ১২ বছর বয়সী ছেলেটি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা মাকে শোয়ার ঘরে বেধড়ক পেটায় বাবা।

২০১৭ সালে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাতের খাবার দিতে দেরি করায় ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন।

পুলিশের কাছে দায়ের করা পারিবারিক সহিংসতার মামলারগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘স্বামী বা তার আত্মীয়দের নিষ্ঠুরতা শিকার’ শব্দমালা লেখা থাকে। পারিবারিক সহিংসতা ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর ভারতে নারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি হিংসাত্মক অপরাধ হয়ে আসছে। ২০২০ সালে পুলিশ এক লাখ ১২ হাজার ২৯২ জন নারীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি পাঁচ মিনিটে প্রায় একটি করে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

ভারত সরকার পরিচালিত জরিপে ৪০ শতাংশের বেশি নারী এবং ৩৮ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, স্ত্রী যদি শ্বশুরবাড়ির অসম্মান করেন, তার বাড়ি বা সন্তানদের অবহেলা করে, তাকে না বলে বাইরে যান, যৌনমিলন প্রত্যাখ্যান করেন বা ঠিকমতো রান্না না করেন তাহলে স্ত্রীকে মারধর করা যথার্থ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চারটি রাজ্যে ৭৭ শতাংশেরও বেশি নারী স্ত্রীকে মারধরকে সমর্থন করেছেন!

অধিকাংশ রাজ্যে পুরুষদের চেয়ে বেশি নারীরাই স্ত্রীকে মারধরকে ন্যায়সঙ্গত বলে মন্তব্য করেছেন। কর্ণাটক রাজ্যে পুরুষের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারী জানিয়েছেন, ঠিকমতো রান্না না করলে স্ত্রীকে মারধর করা স্বামীর জন্য যথার্থ।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার জেন্ডার জাস্টিস প্রোগ্রামের নেতৃত্বদানকারী অমিতা পিত্রে বলেছেন,‘নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং এর ন্যায্যতা পিতৃতন্ত্রের মধ্যে নিহিত। একজন নারীর কীভাবে আচরণ করা উচিত সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট সামাজিক ধারণা রয়েছে, তার সবসময় পুরুষের অধীনস্থ থাকা উচিত, সবসময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছিয়ে থাকা উচিত, তার সেবা করা উচিত এবং অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে তাকে অবশ্যই পুরুষের চেয়ে কম উপার্জন করতে হবে। তাই, একজন নারী যখন এটাকে চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে স্বামীর জন্য তাকে তার জায়গা দেখিয়ে দেওয়া উচিত।’

বনাঙ্গনা নামে এক একটি দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মিসেস কুকরেজা জানান, ভারতীয় নতুন কনেদের দেওয়া একটি জনপ্রিয় উপদেশ হচ্ছে, পালকিতে চড়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছ, কেবল খাটিয়ায় করে লাশ হয়ে বের হবে। তাই অধিকাংশ নারী, এমনকি যারা নিয়মিত মারধরের শিকার হন, তারা সহিংসতাকে তাদের ভাগ্য হিসাবে গ্রহণ করে এবং এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করে না।

ডেইলি বাংলাদেশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments