দখিনের সময় ডেক্স ॥
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদি হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
বাদির আইনজীবী আবু হানিফ বলেন, ‘মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে আহমদ শফীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া এবং হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। একমাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এবং হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজওয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, মাহমুদ, আসাদউল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাসেমী, মোহাম্মদ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবায়ের, মোহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মোবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েমউল্লাহ ও হাসান জামিল। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে ছয়জনকে।
মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর এলাকায় মামুনুল হকসহ আসামিরা বৈঠক করেন। সেই বৈঠক থেকে শফীপুত্র আনাস মাদানীকে মাদরাসার শিক্ষা পরিচালক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। তাকে বহিষ্কার করা না হলে আহমদ শফীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
আরজিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিদের কয়েকজনের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা আনাস মাদানীর কক্ষে ঢুকে সেখান থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেন। মাওলানা ওমরের কক্ষ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা, মুফতি ওসমানের কক্ষ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও মাওলানা দিদারের কক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা লুট করে নেয়।
ওইদিন বিকেলে শফীকে জিম্মি করে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার ও তার পদত্যাগের ঘোষণা মাইকে বলার জন্য চাপ দেন আসামিরা। তিনি অনীহা প্রকাশ করলে তার কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুতের অভাবে অক্সিজেন লাগাতে না পারায় শফী কোমায় চলে যান। তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মাদরাসা থেকে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শফী কোমায় চলে গেছেন। পরের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরজিতে বলা হয়েছে, ‘আসামি নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় মাদরাসায় ভাংচুর করে শাহ আহমদ শফীকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে এবং উনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণে হত্যা করা হয়েছে। মাদরাসা অবৈধভাবে গ্রাস করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববরেণ্য এই ইসলামী চিন্তাবিদকে হত্যা করেছে।’
আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানী জানাজায় যেতে চাইলে তাকে মারধর করে জখম করে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি বলে আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৪৩, ৪৪৮, ৪২৭, ১১৭, ৩২৩, ৩৪১, ৩৮০, ৩০৪, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদি।