জুবারের অল মামুন ॥
প্রকাশ্য দিবালোক। মাথার উপর ঝলমলে সূর্য। বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম এলাকার সোনার দোকান। পাশের সোনার দোকানও খোলা। সামনে দিয়ে চলাচল করে পথচারী ও রিকসাসহ নানান যানবাহন। এরই মধ্যে চুরি হলো আশরাফ জুয়েলারীতে। পুরো নাম, আশরাফ এন্ড সন্স জুয়েলার্স। দুর্ধর্ষ এই চুরির ঘটনা ঘটেছে গত ১৯ মার্চ। এই চোর দল ছিলো খুবই সেয়ান। কিন্তু পুলিশও কম যায় না! যে কারনে চোর দলের শেষ রক্ষা হয়নি শেষ পর্যন্ত।
ধৃত আসামী জামালের তথ্য মতে চট্টগ্রাম জেলার বাকলিয়া থানাধীন বউ বাজার এলাকায় স্বর্ণা জুয়েলার্সের মালিক পবণ রায় এবং অপর ধৃত আসামী সুমনের তথ্য মতে শিফা জুয়েলার্সের মালিক আলম হোসেনের নিকট থেকে ১ টি নেকলেস ও ৯ টি আংটি উদ্ধার করা হয় যা বাদী কর্তৃক সনাক্তকৃত। এ ঘটনায় আবার প্রমানিত হলো, সোনা চুরির সঙ্গে এক শ্রেনীর মালিক জড়িত। এ ব্যাপারে বরিশালের এক জুয়েলারীর মালিকের বিষয়টি অনেকটাই ওপেনসিক্রেট। জুয়েলারীর ব্যবসার আড়ালে সোনাচোর চক্রের এই গডফাদার এক সময় জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, এখন তিনি বিএনপির!
বরিশাল নগরীর কাটপট্টি রোডের আশরাফ জুয়েলারীতে গত ১৯ মার্চ চোরেরদল ১২৬ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। চুরির জন্য তালা ভাঙ্গার বিষয়টি আড়াল করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে চোরের পরনের লুঙ্গি। এই লুঙ্গিও আড়ালে থেকেই কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে তালা ভাংতে সক্ষম হয় দক্ষ চোর। তাদের এ কাজ ছিলো খুবই ঝুকিপূর্ণ। পাশের দোকান এবং পথচারীরা খেয়াল না করলেও সন্দেহ এক সাধারণ রিকসা চালকের। ‘ডালমে কুচ কালাহায়’- এই সন্দেহ থেকে সে দোকানের সামনের সড়কে কয়েক চক্কর দেয়। বিষয়টি চোরদের নজর এড়ায়নি। বিপদ কাটাবার জন্য এই রিকসা দূরের ট্রিপে নিয়ে যায় এক চোর। এদিকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুসারে সন্দেহের তালিকায় সেও পরেছিলো র্যাবের হাতে। তবে পরে সত্য উম্মোচিত হয়েছে।
আশরাফ জুয়েলারীতে ক্লুলেস চুরির ঘটনা তদন্তে নামে কোতয়ালী থানা পুলিশ। এসি রাসেল হোসেনের অক্লান্ত পরিশ্রম দক্ষতায় উন্মোচিত হয় ক্লুলেস চুরির আদ্যপান্ত। পুলিশী তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রথমে চোরচক্রের গ্যাং লিডার সুমন চট্টগ্রাম থেকে ১৪/০৩/২০২০ তারিখ বরিশাল এসে অবস্থান করে দোকানটি চিহ্নিত করে। ১৭/০৩/২০২০ তারিখ অলি চোর দলের ০৭ জন সদস্য নিয়ে বরিশালে আসে। তারা বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে এবং লঞ্চঘাটে ভাই ভাই হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এ খাবার খেয়ে নদীর পারে ফাঁকা জায়গায় বসে চুরির বিষয়ে পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন দুপুর ০১:০০ ঘটিকার সময় তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
দিনে দুপুরে আশেপাশের দোকান খোলা থাকাবস্থায় অত্যন্ত দুঃসাহসীকতার সাথে এই চুরিটি করতে সমর্থ হয়। পুলিশ চেকপোস্টের ভয়ে বাসে না গিয়ে লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার পরিকল্পনা করে। লঞ্চে উঠার পরে তাদের মোবাইল এবং সিমগুলো পানিতে ফেলে দেয়। লঞ্চের কেবিনে বসে চোর চক্র নিজেদের মধ্যে স্বর্ণালংকার ভাগ করে নেয়। সুমন চুরির অভিযান পরিচালনা খরচ বাবদ বেশি পরিমাণ স্বর্ণ রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামে শিফা জুয়েলার্স এর মালিক মোঃ আলমের নিকট বিক্রি করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চোর চক্রকে পুলিশের হাতে ধরা পড়তেই হলো।