দখিনের সময় ডেস্ক:
সরকারী হিসেব মতে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত পশু প্রস্তুত রয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে দাম কমার কথা। কিন্তু বাজার প্রবনতা বলছে ভিন্নকথা। চাহিদার অতিরিক্ত পশু থাকার পরেও এবার কোরবানির পশুর বাজার অনেকটাই চড়া রয়েছে।
কুরবানীর সময় প্রতিবছর পশুর দাম বাড়লেও এবার একটু বেশিই চড়া বলে জানিয়েছেন পাইকারররা। এর পেছনে অস্বাভাবিকভাবে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও পশু প্রতিপালনের ব্যয়কেই দায়ি করছেন খামারীরা। তারা বলছেন, খরচ যে হারে বেড়েছে, তাতে এইবার গরুর দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস, বন্যা ও অতিরিক্তক মূল্যের কারণে কাংখিত ক্রেতা পাওয়া যাবে তো? এ দুশ্চিন্তা সাথে ভুগছেন খামারীরা।
চাহিদার বিপরীতে এবার কোরবানির পশুর সংকট নেই, বরং অতিরিক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। খামারিরাও বলছেন, সরবরাহে ঘাটতি হবে না। এরপরও এবার কোরবানির পশু কিনতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। খামারিরা জানান, বছরের ব্যবধানে পশু প্রতিপালনে খরচ অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর প্রভাব কোরবানির হাটের পশুর দামেও পড়বে। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি দামেই পশু কিনতে হবে বলে বলছেন তারা।
কেরানীগঞ্জের ফিট অ্যান্ড ফ্রেস এগ্রোর কর্ণধার আকবর আলম উপল জানান, গত বছর তার খামারে যে গরু এক লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেটি এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাব অনুযায়ী এবার তার খামারে কোরবানির পশুর দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আমাদের সময়কে উপল বলেন, কেবল আমার খামারেই নয়, রাজধানী ও আশপাশের খামারগুলোতে এবার দাম একই হারে বাড়তি রয়েছে। মূলত গোখাদ্যের দাম এ বছরের অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। গতবার এক লাখ টাকায় সাড়ে তিন মণ ওজনের কোরবানির গরু পাওয়া গেলেও এবার সেখানে পাওয়া যাচ্ছে পৌনে তিন মণ থেকে তিন মণ ওজনের গরু।
বছরের ব্যবধানে বেশিরভাগ গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গমের ভুসির বস্তা (৩৭ কেজি) আগে ১১০০-১২০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তা ১৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দিন আগেও ২২০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। অপরদিকে ধানের কুড়ার কেজি এখন ১৩-১৪ টাকা কেজি কিনতে হয়, আগে যা ৮-৯ টাকা কেজি ছিল। মসুরের ভুসি এখন ৩৮-৪০ টাকা কেজি, আগে ছিল ২৫-২৬ টাকা। বুটের ভুসির কেজি ৬০-৬৫ টাকা কিনতে হচ্ছে, আগে কিনতে পেরেছি ৪০-৪২ টাকা। খাবারের দাম এই হারে বেড়ে যাওয়ায় পশুর দামও বেড়েছে।
কেবল রাজধানীর খামারগুলোতেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পশুর খামারগুলোতেও এবার দাম অনেকখানি বাড়তি রয়েছে বলে জানা গেছে। কোরবানির হাটে তুলবেন বলে পাবনা জেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের খামারি মো. রাজু আহমেদ এবার ৪৫টি গরু লালন-পালন করেছেন। ইতোমধ্যে তার বেশিরভাগ গরু বেপারিদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দাম গতবারের চেয়ে এবার বেশি বলে জানান তিনি।
এদিকে সরকারের হিসাব বলছে, এ বছর কোরবানির জন্য দেশে ৯৭ লাখ পশুর চাহিদার বিপরীতে এক কোটি ২১ লাখ প্রাণী রয়েছে। অর্থাৎ ২৪ লাখ পশু অতিরিক্ত রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গতকাল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ তথ্য জানান। সভায় মন্ত্রী বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি থাকায় কোনো ধরনের সংকট হবে না।