দখিনের সময় ডেস্ক:
প্রচলিত অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইবার অপরাধ বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাইবার অপরাধীরা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে এমন অপরাধ করে যাচ্ছেন। কখনও ভুয়া সরকারি কর্মকর্তা সেজে, কখনও বা ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, আবার কখনও স্পর্শকাতর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলছে সাইবার অপরাধ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অল্পকিছু কৌশল খাটিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলা দিতে সক্ষম হচ্ছেন সাইবার অপরাধীরা। কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভুয়া সিম কার্ড ব্যবহার।
অনলাইন প্রতারকদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ভুয়া সিমের জন্য। সাইবার অভিযোগের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামির সিম থাকে ভুয়া।
সাইবার অপরাধীরা কেবল হুমকি নয়, গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এরপরও সাইবার অপরাধীদের ঠেকাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল বছর (২০২১ সাল) সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন মোট ৯৬৩ জন। এর মধ্যে ৪৮০ জন নারী ও ৪৮৩ জন পুরুষ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৮ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে, ৩১ শতাংশের বয়স ১৯ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে, ৩৪ শতাংশের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে, ২৩ শতাংশের বয়স ৩৬ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে এবং চার শতাংশের বয়স ৫৫ বছরের ওপরে।
সিটিটিসির সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সূত্রে জানা যায়, আগে একটি সময় ছিল কোনো ব্যক্তি সিম তুলতে গেলে কৌশলে তার আঙুলের ছাপ রেখে দিতেন দোকানিরা। পরে ওই ব্যক্তি যাওয়ার পর তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে একাধিক সিম তুলে নিতেন তারা। পরে এসব সিম অপরাধীরা বাড়তি টাকা দিয়ে কিনে নিতেন। কিন্তু এখন একটি সিম তোলার তিন ঘণ্টা পর আরেকটি সিম তোলার নিয়ম হয়েছে।
অপরাধের ১৯ শতাংশ ফেসবুক আইডি হ্যাকজনিত, এক শতাংশ ই-মেইল আইডি হ্যাকজনিত, ১৫ শতাংশ ফেক (ভুয়া) আইডি সংক্রান্ত, ১৫ শতাংশ সেক্সটরশন সংক্রান্ত, ২২ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত এবং ২৮ শতাংশ অন্যান্য হ্যারাজমেন্ট সংক্রান্ত সাইবার অপরাধ।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের গত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ২০৬টি সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। এর মধ্যে ফেসবুক আইডি হ্যাক সংক্রান্ত ১৭টি, অনলাইন হ্যারাজমেন্ট ৩৭টি, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫১টি, অনলাইন প্রোডাক্ট পারচেজ সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগ চারটি, পার্সেল ফ্রড সংক্রান্ত পাঁচটি, অনলাইন ব্ল্যাক-মেইলিং সংক্রান্ত দুটি, অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগ সংক্রান্ত ২৭টি, পর্নোগ্রাফি ধারণ ও প্রচার সংক্রান্ত ২৪টি, ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রচারণা সংক্রান্ত সাতটি এবং অন্যান্য ৩২টি অভিযোগ আসে।