দখিনের সময় ডেস্ক:
নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে করেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে করেছে। ইলেকশন যতই সামনে আসছে আবারো ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মানে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে। তাদের কী লাভ হবে জানি না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তো ক্ষতিই হবে।
আজ বুধবার (৩ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নব নির্বাচিত বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে রাসেলকে পর্যন্ত খুন করলো, সেই পরিবার থেকে আমি বেঁচে সরকারে আসলাম। সাফল্য এনে দিলাম। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিলাম। এটা তো অনেকেই পছন্দ করবে না। কাজেই তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি জানি তাদের তৎপরতা অনেক বেশি। তবে যারা এই তৎপরতা চালাচ্ছেন, তাদের কার কী অবস্থা, সে খবরও আমি রাখি। চিনি তো। আমার তো অচেনা কেউ নেই। তাদের বিষয়ও আমার জানা আছে। তারা তাদের চক্রান্ত করে যাচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা তো এক একটা জিনিস টার্গেট করে কাজ করছি। যেমন কেউ ভূমিহীন থাকবে না। এটা জাতির পিতা শুরু করেছিলেন— নোয়াখালী থেকে। আমি সেই দায়িত্বটা পালন করে যাচ্ছি। প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম। কিন্তু জ্বালানি সবকিছুর দাম এত বেড়ে গেছে। তার কারণে আমাদের সাশ্রয়। আমরা না, সমস্ত ইউরোপ থেকে শুরু করে সব দেশে এমন কী আমেরিকাও এখন জ্বালানি সাশ্রয় করে। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছি। যাতে ভবিষ্যতে আবার বিপদে না পড়তে হয়। তিনি বলেন, আজকে এটা প্রমাণিত সত্য যে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। করেও না। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা ক্ষমতার চেয়ারটা কীভবে দখল করে রাখবে ওই চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। আমাদের কাছে এটা কোনো বড় বিষয় নয়। ক্ষমতাটা আমার কাছে জনগণের সেবা করার একটা সুযোগ। তো ক্ষমতা থাকলে আছে না থাকলে নাই। থাকলে যেটা সুবিধা হয় দেশের মানুষের জন্য কাজ করার একটা সুযোগ পাই। আর সেই সুযোগটা যতটুকু পারি কাজে লাগাই। আমি সেভাবেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আবার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একেবারে তৃণমূলের মানুষের উন্নতি ও পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছি, ওইভাবে কিন্তু আমাদের যাত্রা শুরু করেছি। গ্রামের সাধারণ গরীব মানুষগুলো তাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। কত অত্যাচার সহ্য করেছেন। জেল খেটেছেন। তাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তিনি কিন্তু এ মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। আর সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকবিলা করেও আমাদেরৃ তবে কৃচ্ছতাসাধন করতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে। এক ইঞ্চি জমি যাতে অনাবাদী না থাকে সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে। কারণ একে তো করোনা, সেই সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তারপর এই স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। এই স্যাংশনের পরে তো সব জিনিসের দাম বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানিনা কারা লাভবান হচ্ছে এই যুদ্ধে। শুধু অস্ত্র যারা উৎপাদন করে তারা লাভবান হচ্ছে। আর মরছে সাধারণ মানুষ। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে সবার আজ কী মানবেতর জীবন! সেটাই সব থেকে দুঃখজনক। মানুষের তৈরি দুর্যোগ আসে… আন্তর্জাতিক ধাক্কাটাও যেমন আসবে। তিনি বলেন, প্রত্যেককে বলে দিচ্ছি। এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। যে যা পারো লাগাও। একটা মরিচ গাছ লাগিয়ে খেলেও তো কাজে লাগে। এটা ঠিক আমাদের সবাই এটা করছে। এটা সবাইকে করতে হবে। খাদ্যটা যদি নিজে উৎপাদন করে ঠিক রাখতে পারি তাহলে আমাদের পরমুখাপেক্ষী হতে হবে না। সেটা আমাদের সব থেকে বেশি কাজে লাগবে। এটাকে লক্ষ্য রেখে প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কেবল উঠে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে প্রথম আসলো করোনা। তারপর যুদ্ধ। এরপর স্যাংশন। পাল্টাপাল্টি স্যাংশন। যার জন্য আজকে সারা বিশ্বই অত্যন্ত এটকটা দুঃসময়ের মধ্যে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তারপরও বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত ভালো আছে। এক কোটি মানুষকে আমরা স্বল্পমূল্যে খাবার দিচ্ছি। কোনো মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সেটা আমাদের চেষ্টা। সেটাই আমরা করছি। সেই প্রচেষ্টা আমরা নিচ্ছি। এটা করে যাবো।
১৫ আগস্টের প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট যারা মারা গেছেন— তাদের তো কাফন-দাফন কিছু হয়নি। কিন্তু আব্বার লাশটা যখন টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গেছেন তখন ওখানকার যে মাওলানা সাহেব এবং আমাদের কয়েকজন, তারা কিন্তু জোর করেছিলেন যে না আমরা…। আর্মি হেলিকপ্টারে করে মরদেহ সোজা সেখানে নিয়ে যায়। তারা কোনো মতে কবর খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েই চলে আসবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেব, ওনারা সবাই বলেন যে আপনারা যদি মনে করেন শহীদী মৃত্যু, তাহলে ওভাবেই কবর দিতে পারেন। তবে মুসলমানের লাশ— এটা তো একটু কাফন-দাফন দিতে হবে। সমস্ত এলাকা কারফিউ ছিল। সব বন্ধ। টুঙ্গিপাড়ায় তখন কোনো দোকানও ছিল না। যেতে হতো সেই পাটগাতী বাজারে। তখন রেডক্রসের যে কাপড় তিনি (বঙ্গবন্ধু) সাধারণ মানুষদের বিলাতেন ওই কাপড় নিয়ে এসে তার পাড় ছিড়ে সেটাই কিন্তু তিনি নিয়ে গেছেন। আর কিছু নেননি মানুষের কাছ থেকে। আর কিছুই নেননি। সেই রেড ক্রসের কাপড় নিয়েই ওনার কাফন। এটা হলো বাস্তবতা। আর আমাদের যারা মারা গেছেন তাদের তো কিছুই করা হয়নি। যে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়েছে।